অনুসন্ধানী ও দুর্নীতিবিরোধী সাংবাদিকতাকে থামাতে মাদক ব্যবসায়ী ও পুলিশের একটি সিন্ডিকেট—এক তরুণ সাংবাদিককে ডিজিটাল ব্ল্যাকমেইল ও ভয়ভীতিতে নিয়ে এসেছে অসহায় অবস্থায়। ময়মনসিংহ নগরের অনুসন্ধানী সাংবাদিক মামুনুর রশীদ মামুন (পরিচয় সরকারি নথি অনুযায়ী) বলেন, নিজের জীবন, পরিবার ও পেশাগত নিরাপত্তা রক্ষায় তিনি রাষ্ট্রের কাছে আইনগত সুরক্ষা চান।
অভিযোগে মামুন জানান–কেওয়াটখালী রেললাইন এলাকায় মাদকচক্রের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করার সময় ছদ্মবেশে প্রবেশ করে তারা; তদন্তের স্বার্থে চক্রটির বিশ্বাস অর্জনের জন্য অনিচ্ছাকৃতভাবে অল্প পরিমাণ গাঁজা সেবনের পরিস্থিতি তৈরি করা হয় তাকে। ঠিক সেই সময় গোপনে ভিডিও ধারণ করে রাখা হয়—আশঙ্কাজনকভাবে সেই ভিডিওকে বেগবান করে ব্ল্যাকমেইল শুরু করা হয়। পরে প্রকাশ্যে মুখ খুললে কিংবা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করলে ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে অপবাদ, হুমকি ও মানহানির আশঙ্কা দেখানো হয় বলে অভিযোগ। ভুক্তভোগীর কথায়—৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭: ৩০ মিনিটের দিকে– “হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়ে পরে ডিলিট করে দেয়,ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানার এস আই খালিদ। যাতে আমি কোনও প্রমাণ রাখতে না পারি। বলা হয়— ঘাগড়া খুনের বিষয়ে আর কোন সংবাদ করলে ফল খারাপ হবে!” এদিকে “সাংবাদিক মামুনের সংবাদ থামাতে -ময়মনসিংহ কোতোয়ালীর থানার এএসআই আলী ও এসআই খালিদ ব্ল্যাক মেইল ষড়যন্ত্র ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের রেকর্ড ফাঁস হয়েছে!" সূত্রে জানা যায়,সাম্প্রতিককালে কোতোয়ালীর এএসআই আব্দুল আলীর দায়িত্বে তদন্তে গাফিলতি থাকার অভিযোগে একটি হত্যাকাণ্ডের সংবাদ প্রকাশ করেন মামুন। সেদিনের পর থেকেই নতুন করে ভয়ভীতি ও ব্ল্যাকমেইলের তৎপরতা শুরু হয় বলে তিনি দাবি করেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে—এসআই খালিদ ওয়াটসআপে ফোন করে–অন্য একজন পুলিশ সদস্য এসআই মোস্তাফিজের গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে তাকে স্তব্ধ করার চেষ্টা করেছে।
পুলিশ–প্রশাসনের কাছে বিচার দাবি ও অনুরোধ জানিয়ে বলেন—১.অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় মামলা গ্রহণ ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। ২. সাংবাদিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিক। ৩. ব্ল্যাকমেইলিং-এর ভিডিও জব্দ করে এর প্রচার ও হুমকির উৎস চিহ্নিত করা হোক। ৪.ভবিষ্যতে সাংবাদিকদের ওপর কোন ভয়ভীতি,চাঁদাবাজি বা ব্ল্যাকমেইলিং যাতে না ঘটে—সেজন্য নির্দেশনা জারি করা হোক।
ভুক্তভোগী মামুন আরও জানিয়েছেন, হোয়াটসঅ্যাপ কল লিস্ট, ভয়েস রেকর্ড ও কয়েকটি ভিডিও ক্লিপসহ তিনি হাতে নথিসহ প্রমাণ রেখেছেন; তবে তিনি আশঙ্কা করেন,কিছু প্রমাণ দূর করে দেওয়া হচ্ছে বা চাপ প্রয়োগ করে তা মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ ও সংগঠনের প্রতিক্রিয়া—
মিডিয়া স্বাধীনতা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ডিজিটাল ব্ল্যাকমেইল ও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যুক্ত সিন্ডিকেট, প্রেস–স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। তারা অনতিবিলম্বে স্বাধীন তদন্ত ও সন্ত্রাসী আচরণে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তৎপরতা দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। স্থানীয় এবং জাতীয় সাংবাদিক সংগঠনগুলোও ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে এবং প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা ও নিরাপত্তার দাবি করেছে।
প্রশাসন ও পুলিশের বক্তব্য চাওয়া হলেও—
অভিযুক্ত বলে উল্লেখ করা কোতোয়ালি মডেল থানার এএসআই আলী ও এসআই খালিদকে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা মন্তব্য দিতে অনিচ্ছুক বা প্রতিক্রিয়া দেননি। থানার ঊর্ধ্বতনের কাছ থেকেও এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
জনমত ও প্রশ্ন—স্থানীয় জনগণ ও গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশ্ন করছেন— সত্য বললে কি দেশে নিরাপত্তা থাকে না? সাংবাদিকতা কি কেবল বই-পাতায় স্বাধীন? মাদকচক্র ও পুলিশ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কাকে দিয়ে থামানো হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব—বলে অনেকে মনে করেন।
সংবাদকর্মীর অনুরোধ—ভুক্তভোগী সাংবাদিক মামুন চান— দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে তদন্ত পরিচালনা করে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হোক এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি সরকারিভাবে দেওয়া হোক। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি যেভাবে প্রকাশ হয়েছে তা স্থানীয় গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের জন্য উদ্বেগজনক একটি ইস্যু হিসেবে দাঁড়িয়েছে—আর সেটি সমাধান না হলে সাংবাদিকতা ও জনস্বার্থের, স্বার্থে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা পাওয়া যাচ্ছে। সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া পেলে আপডেট জানানো হবে।