
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারোবাড়ী ইউনিয়নের উত্তর বনগাঁও গ্রাম। এখানকার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সোহাগী (ছদ্মনাম) হঠাৎ মাথা ঘুরে হুড়মুড় করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরিবারের লোকজন দ্রুত তাকে তুলে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিলে চিকিৎসক জানিয়ে দেন—শিশুটি তীব্র এজমা ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত। চিকিৎসকের ভাষ্য,“বাতাসে স্থায়ী ধুলাবালু ও ধোঁয়া—ফুসফুসের জন্য ভয়ংকর। শিশুদের জন্য আরও ভয়াবহ।” সোহাগীর পরিবারের দাবি,এ রোগের পেছনে দায়ী বাড়ির পাশেই গড়ে ওঠা দুইটি অবৈধ ইটভাটা—ভাই ভাই ব্রিকস ও এমএবি ব্রিকস। দুই ভাটার চিমনি দিন-রাত কালো ধোঁয়া উগরে দিচ্ছে; বাতাস, পরিবেশ আর মানুষের স্বাভাবিক জীবন একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে।
শত শত শিশুর শ্বাস আটকে যাচ্ছে: স্থানীয়দের অভিযোগ,শুধু সোহাগী নয়—উত্তর বনগাঁও ও আশপাশের এলাকার শতাধিক শিশু লাগাতার কাশি,শ্বাসকষ্ট,অ্যালার্জি ও মাথা ঘোরা সমস্যায় ভুগছে। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও ভারী ডাস্ট বাতাসে মিশে গ্রামজুড়ে তৈরি করেছে এক প্রকার ‘বিষাক্ত আবহ’। অভিভাবকদের কথা,“আমাদের সন্তানরা স্কুলে যেতে ভয় পায়। পড়ার টেবিলে বসে কাশি থামে না। ডাক্তার বলছেন পরিবেশ বদলাতে হবে—কিন্তু আমরা কোথায় যাবো?”
কৃষিজমি–পুকুর–গাছপালা সব ধ্বংস!–দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত এসব ভাটার কারণে এলাকার উর্বর কৃষিজমি তার উর্বরতা হারাচ্ছে। পুকুরের পানি ঘোলা হয়ে মাছ মারা যাচ্ছে। গাছপালা ঝরে যাচ্ছে আগেভাগেই। পরিবেশবিদরা বলছেন—“অবৈধ ভাটা শুধু পরিবেশ নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও ধ্বংস করছে।” কৃষকদের অভিযোগ, “ফসল ফলাতে পারি না। জমিতে ছাই পড়ে থাকে। গাছের পাতা পুড়ে যায়। এই ভাটাগুলো আমাদের জীবন-জমি সব শেষ করে দিচ্ছে।”
আইন আছে,প্রয়োগ নেই—প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে ক্ষোভ! সরকারের কঠোর নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা পরিচালনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু উত্তর বনগাঁওতে বছরের পর বছর ধরে দুইটি ভাটা প্রকাশ্যেই চলছে—প্রশাসন যেন দেখেও না দেখার ভান করছে। স্থানীয়দের ক্ষোভ—“আমরা বারবার অভিযোগ করেছি। কেউ আসে, দেখে চলে যায়। কিন্তু ভাটা বন্ধ হয় না। মনে হয় শক্তিশালী মহলের ছায়া আছে।” সচেতন মহলের হুঁশিয়ারি–অবিলম্বে ভাটা বন্ধ না হলে রাস্তায় নামবে জনতা! একাধিক সামাজিক সংগঠন, শিক্ষার্থী,অভিভাবকসহ এলাকার সচেতন নাগরিকরা একযোগে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন—
“শিশুদের শ্বাস আটকে গেলে আমরা আর চুপ থাকব না। অবিলম্বে ভাই ভাই ব্রিকস ও এমএবি ব্রিকস বন্ধ না হলে কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।” সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণঃ উত্তর বনগাঁওয়ের মানুষের প্রশ্ন—সন্তানদের জীবন কি অবৈধ ভাটার চেয়ে মূল্যহীন? পরিবেশ,কৃষিজমি,পানি ও মানুষের স্বাস্থ্যের এই ভয়াবহ ক্ষয়–ক্ষতির দায় কে নেবে?
গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করা হচ্ছে। শিশুদের জীবন রক্ষায় এবং আইন–নীতিমালা বাস্তবায়নে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা প্রয়োজন। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরই যেন প্রশাসন নড়ে—এটাই এলাকার মানুষের প্রত্যাশা।