ফুলপুর সাহাপুর থেকে উদ্ধার করা সেই অজ্ঞাত নারীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ভর্তি করে ফুলপুর থানা পুলিশ।গত রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু ঘটে তার।এখন পর্যন্ত পরিচয় মেলেনি সেই নারীর।অবশেষে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলে কালবেলাকে জানিয়েছেন ফুলপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এর আগে পুলিশ গভীর রাতে বাশাটি রাস্তার পাশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করলেও পরিচয় পাওয়া যায়নি তার কয়েক মাস আগে উপজেলার বওলা থেকে হলুদ বস্তা বন্দী সেই অজ্ঞাত নারীর পরিচয় সনাক্ত করা যায়নি যেটা মরিয়ম কাণ্ডে সারা দেশব্যাপী চাঞ্চল্য তৈরি করেছিল। একটি স্থির ও শান্তিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থায় স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের প্রভাব ইতোমধ্যেই আঁচ ফেলেছে।যে কারণে পারিবারিক,সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অবক্ষয় প্রকট আকার ধারণ করেছে। যে কারণে প্রত্যহ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেওয়ারিশ অসংখ্য লাশ পাওয়া যাচ্ছে।এ সকল লাশের কোন পরিচয় পাওয়া না যাওয়ার কারণে এর পিছনে কারা দায়ী তা চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো পৃথিবীতে কেউ তো বেওয়ারিশ হয়ে জন্মায় না,তাহলে মানুষকে মৃত্যুর পর বেওয়ারিশ হতে হবে কেন?মা-বাবার হাত ধরে সন্তানের ধরণীতে আগমন ঘটে।এখানে এসে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মানুষ যেমন কারো তত্ত্বাবধানে থাকে তেমনি পরিণত বয়সে তার ওয়ারিশ হিসেবে কাউকে না কাউকে ধরায় আনে।এভাবেই যুগ যুগ ধরে চক্রাকারে মানুষের বংশগতি রক্ষা হয়েছে।
ধরণী থেকে কারো বিদায়ের মাধ্যমেই তার সম্পূর্ণ পরিচয় মুছে যায় না বরং মানুষের কর্ম এবং সৃষ্টির মাধ্যমে হাজার হাজার বছর মৃত মানুষও জীবিত মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকে।যারা পৃথিবীতে মানুষের কল্যাণ সাধন করে খ্যাত হয়েছেন তাদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ জীবিত মানুষেরা এ সকল মানুষের মৃত্যুর হাজার বছর পরেও তাদের জন্ম-মৃত্যু দিবস পালন করে কিংবা বিভিন্ন সভা সেমিনারে তাদের নাম সম্মানের সাথে উচ্চারণ করা হয়। পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই যিনি কোন না কোন দিকের বিবেচনায় মূল্যহীন।হতে পারে পৃথিবীতে কারো প্রয়োজন অনেক আবার কারও অতি সামান্য।তবুও সবাই অতি নগন্য হলেও মূল্যবান।আবার এমনও ব্যক্তি আছে যিনি সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বহীন কিন্তু তার নিজস্ব পরিমন্ডল অর্থ্যাৎ তার পরিবার কিংবা বিশেষ কারো কাছে সবকিছু।মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা জীবিত থাকার সময় যতটুকু প্রকাশ না পায় সে মৃত্যু বরণ করলে তার সবটাই প্রকাশ পায়। সাধারণত মাত্র কয়েক বছরের জন্য মানুষ এক দেশ থেকে অন্যদেশে পাড়ি জমালে তাতেই আত্মীয় স্বজনের কষ্টের সীমা থাকে না।কাজেই যদি চিরতরে কেউ পৃথিবীর সকল মায়া ছিন্ন করে চলে যায় কিংবা যেতে বাধ্য করা হয় তারপরেও তার প্রতি মায়া থেকেই যায়।মৃত্যুর পরে কখনো কখনো মায়ার বন্ধন আরও দৃঢ় হয়।
মানুষের মৃত্যুবরণে তার শূন্যতা এবং প্রয়োজনীয়তা পুরোপুরি অনুধাবন করা যায় যতটা তার জীবদ্দশায় অনুধাবিত হয়নি।এভাবেই এ জগত সংসার চলছে।কারো পিতামাতা,সন্তান কিংবা অন্যকোন আত্মীয় স্বজন মৃত্যুবরণ করলে তার স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে মালিকানাধীন কিংবা রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে সমাহিত করে তাকে হৃদয়পটে বাঁচিয়ে রাখতে চায়।আত্মীয় স্বজনের লাশ সবার কাছেই বোঝা কারণ আপন জনের প্রস্থান অন্তরের গভীরে আঘাত করে কিন্তু এতটা বোঝা নয়,যে বোঝার ভার বহন করতে মানুষ অস্বীকার করবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বিশ্বায়ণের পূর্ণ প্রভাব ছোঁয়া দিলেও বাংলাদেশে এখনও ততোটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে নি।যে কারণে বাংলাদেশের মানুষ সবাইকে আপন ভাবতে পারে এবং একজনের ব্যথায় অন্যজন এখনও ব্যথিত হয়। মানুষ মারা যেতে পারে এবং সেটা স্বাভাবিক কিংবা অস্বাভিবিক উভয়ই হতে পারে কিন্তু তার পরিচয় থাকবে না কেন?কেন বেওয়ারিশ হবে?বলা বাহুল্য,শনাক্তকৃত লাশের সংখ্যা এই বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যার সাথে যোগ করলে লাশের অংকটি কত বিশাল হবে,তা ভাবা যায়!
এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় সারাদেশে অজ্ঞাতনামা লাশের ৭৮ শতাংশই শনাক্ত হয় না।হতভাগ্যরা হয় বেওয়ারিশ লাশ।বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে দাফন করা হয়।জন্মদাতা বা জন্মদাত্রী,পরিবারপরিজন,পড়শীরা শেষবারের মতো প্রিয় মুখটি দেখতেও পারেন না।অজ্ঞাতনামা লাশ শনাক্তের উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ।অজ্ঞাতনামা লাশ শনাক্তের সিস্টেম ডেভেলপ করা হচ্ছে। দেশে অজ্ঞাত লাশ শনাক্তের ৪৭টি ইউনিট স্থাপন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দেশে এত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী,বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থাকা সত্ত্বেও এত লাশ কেন এ জাতি উপহার পাচ্ছে! বেওয়ারিশ লাশের দীর্ঘ মিছিল কমিয়ে আনতে সরকারকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।আরও বেশি তৎপর হতে হবে র্যাব-পুলিশসহ সব গোয়েন্দা সংস্থাকে। বেওয়ারিশ লাশের দ্রুত সনাক্ত করে তাদেরকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।তা না হলে বেওয়ারিশ লাশের সাথে চিহ্নিত লাশের সারিও দিনে দিনে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতেই থাকবে।বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা কমিয়ে আনতে পুলিশকে আরও তৎপর এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার নির্ভর হতে হবে।মোদ্দাকথা হলো যে করেই হোক বেওয়ারিশ লাশের মিছিল থামাতে হবে।