ময়মনসিংহ নগরীর আলীয়া মাদ্রাসা রোডের পালপাড়া এলাকায় মদিনাতুল কুরআন ওয়াস সুন্নাহ নামের একটি মাদ্রাসায় এক শিশুশিক্ষার্থীকে বলৎকারের চেষ্টা করে শারীরিক নির্যাতন করেছে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক হুজুর আলামিন। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৬ জুন, সোমবার বিকেলে। এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এই হুজুর আলামিনের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও অনৈতিক ও অশ্লীল কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছিল। সেসময় অভিযুক্ত পার পেয়ে যাওয়ায় এবার সে আরও সাহস পেয়ে এমন ভয়াবহ ঘটনার জন্ম দিয়েছে বলে মনে করেন এলাকাবাসী। ভুক্তভোগী শিশুর পরিবার জানায়, তারা তাৎক্ষণিক ভাবে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও এলাকার গন্যমান্যদের অবগত করলে অভিযুক্ত শিক্ষক আলামিন পালিয়ে যায় তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলায়। ফলে স্থানীয়ভাবে বিচার করা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগ আরও ভয়াবহ! এখানেই শেষ নয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, হুজুর আলামিন শুধু যৌন নির্যাতনের মতো জঘন্য কাজেই জড়িত নয়—সে প্রতিটি মাদ্রাসা ছাত্রের ভর্তি ফি বাবদ দেড় লক্ষ থেকে দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত আত্মসাৎ করেছে। এই টাকা আদায় করে সে ব্যক্তিগত কাজে ব্যয় করেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে—এই ছাত্রদের ভবিষ্যৎ কী হবে? তাদের শিক্ষা, তাদের আশ্রয়—সবকিছু ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিল এই ‘ধর্মব্যবসায়ী’। কে নেবে এই দায়ভার? তারা কি শুধুই নির্যাতনের শিকার হবে, নাকি কোনো জবাবদিহি হবে? এলাকার এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, “ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এমন ন্যক্কারজনক কাজ করে কেউ রেহাই পেলে, তা পুরো সমাজব্যবস্থার জন্য ভয়ঙ্কর বার্তা বহন করে। প্রশাসনকে এবার কঠোর হতে হবে। সচেতন সমাজের প্রশ্ন ও দাবি: মাদ্রাসা কি শিশু নির্যাতনের নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠছে? যাদের কাছে শিশুরা ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা নিতে আসে, সেই পবিত্র স্থানে যদি ‘শয়তান’ রূপী কিছু মানুষ আশ্রয় নেয়—তবে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? শিশুরা কোথায় যাবে, কাকে বিশ্বাস করবে? শিশু অধিকারকর্মী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো জোর দাবি জানিয়েছে—শিশু সুরক্ষা আইন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় দ্রুত মামলা গ্রহণ করে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এই প্রতিবেদন কেবল একটি ঘটনা নয়—এটি একটি কলঙ্কিত চিত্র, যা গোটা সমাজকে নাড়া দেয়। এখনই সময় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলোকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে গড়ে তোলার। নয়তো এমন ‘লালসার কারাগার’ থেকে সমাজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। সচেতন সমাজ এখন প্রশ্ন করে—শাস্তি কবে? জবাবদিহি কোথায়?