
আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস-২০১২ পালন উপলক্ষ্যে বুধবার ময়মনসিংহে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগরীর টাউন হল প্রাশন থেকে বর্ণাঢ্য র্যালী বের হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। র্যালীতে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোঃ আনোয়ার হোসেন নেতৃত্ব দেন।
র্যালী শেষে জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে দিবসটির তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সমস্ত আইন করা হয়েছে জনগণের ওপর প্রযোগ করার জন্য। তবে কিছু একটা আইন করা হয়েছে যেটা জনগণ কর্তৃপক্ষের ওপর প্রয়োগ করবে। এই আইনে জনগণ সরকার/রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করতে পারবে, তখন স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে, দুর্নীতি কমে যাবে। সরকারি দপ্তর প্রতিনিয়ত লিখিত ও অলিখিতভাবে জনগণকে তথ্য ও সেবা দিচ্ছে। গোপনীয় আইন রক্ষা করে তথ্য অধিকার আইনের আদলে আমরা জনগণকে সর্বোচ্চ তথ্য প্রদান করছি। সরকারি দপ্তরের ওমেনপোটাল প্রতিনিয়ত হালনাगान করা হচ্ছে। তথ্য চাওয়ার ক্ষেত্রে আইন সম্পর্কে জনগণকে আরো সচেতন হতে হবে। প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি সরকারি পঞ্চাশ হাজারের বেশি ওয়েবসাইটসহ ই-নথি পদ্ধতি, ই-পর্চা প্রদান, ভূমি উন্নয়ন কর অনলাইনকরণ ইত্যাদি সেবা রয়েছে। এগুলো জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণে ভূমিকা রাখছে।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফাল্গুনী নন্দী বলেন, আমরা ছোটবেলায় পড়েছি ‘জ্ঞানই শক্তি’ কিন্তু এটা পরিবর্তিত হয়ে ‘তথ্যই শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে। যার কাছে যতবেশি তথ্য থাকবে সে ততবেশি ক্ষমতাশালী। সবকিছুই তথ্য নির্ভর হয়ে গেছে।
অনুষ্ঠানে দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে জেলা তথ্য অফিসার শেখ মোঃ শহীদুল ইসলাম বলেন, আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি তথ্য অধিকারের সাথে দুর্নীতি প্রতিরোধে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সরকার দুর্নীতি প্রতিরোধে পাঁচটি সামাজিক দায়বদ্ধতা উপকরণ ধাবিত করেছেন, এর মধ্যে অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তথ্য অধিকার। এছাড়াও সরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য আরো কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতা উপকরণ সরকারি দপ্তরে যুক্ত করেছেন। তারমধ্যে এপিএ, জিমারএস, সিটিজেন চার্টার ইত্যাদি। এই আইন সরকারি দপ্তরের পাশাপাশি বেসরকারি দপ্তরের জন্যও সমানভাবে রয়েছে।
সভাপতির বক্তৃতায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) গুলক কান্তি চক্রবর্তী বলেন, ময়মনসিংহ জেলা ও বিভাগে তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে একটা ভারসাম্য অবস্থা বিরাজ করছে। যার একটি প্রমাণ হচ্ছে তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রশাসন সারা দেশের মধ্যে এ বছর দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণে সরকার সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে সুশাসনের ওপরে। আর সুশাসনের একটি অন্যতম হলো, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। তথ্য অধিকার হচ্ছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় পৌঁছানোর একটি সিটি। এছাড়াও জিআরএস, এনজাই এস ইত্যাদি রয়েছে। তবে তথ্য চাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি দপ্তরকে যেন বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে না হয় সে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘তথ্য প্রযুক্তির যুগে জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত হোক’ বিষয়ে জনসচেতনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে সুসজ্জিত প্রচার ড্যানের মাধ্যমে সড়ক প্রচার, নগরীর বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রামাণ্যচিত্র/তথ্যচিত্র / ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া আঞ্চলিক তথ্য অফিস, পিআইডি’র উদ্যমে অনলাইন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারের জন্য গণমাধ্যমের সাথে সহযোজন করা হয়।
এর আগে তথ্য অধিকার আইন সংক্রান্ত একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা সরকারি দপ্তরের ওয়েবপোর্টাল হালনাগাদকরণসহ জনগণের তথ্য পাওয়ার দুয়ার যেন ভুলে যায় এ প্রত্যাশা করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার, টিআইবি প্রতিনিধি, টিআইবি’র ইমেস গ্রুপের সদস্যবৃন্দ, সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি ও সদস্যবৃন্দ, গনমাধ্যমকর্মী, আঞ্চলিক তথ্য অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ এবং জেলা তথ্য অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।