ময়মনসিংহে বহু অপরাধের হোতা আকুয়া ভাঙ্গাপুলের নুর উদ্দিন আকন্দের অত্যাচারে এলাকাবাসি অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, খুন, অস্ত্র, চাদাবাজি, ঠেকবাজি, সোনার দোকানে ডাকাতিসহ অসংখ্য অভিযোগে ১৪/১৫টি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি আকুয়া দক্ষিণপাড়ার লিটু ও ইলিয়াসকে হত্যার চেষ্ঠাসহ অর্থ লুটের ঘটনায় আবারো প্রকাশ্যে আসে নুর উদ্দিনের অপরাধ কর্মকান্ড। এ ঘটনায় কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা নং ৯৯(০৯) ২২ দায়ের হয়েছে।
এলাকাবাসি সুত্রে জানা গেছে, নুর উদ্দিনের প্রধান ব্যবসা হচ্ছে মাদক ব্যবসা। তার রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট। কেউ সিন্ডিকেট থেকে বেরিয়ে গেলে তার উপর চলে নির্যাতন। এছাড়া এলাকায় কেউ বাসাবাড়ি নির্মাণ, জমি ক্রয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করলে তাকে দিতে হয় মোটা অংকের চাদা। চাদা না দিলে প্রতিশোধে নেমে তাকে হত্যাসহ পঙ্গু পর্যন্ত করে দিতে পিছপা হন না।
আকুয়া দক্ষিণপাড়ার লিপি তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা নং-৯৯(০৯)২২ দায়ের করে অভিযোগ করেছেন, তার ছোট ভাই রাফেল এর সাথে নুর উদ্দিন ও তার সহকর্মী লাবু মিয়া, সোহান, সজল ওরফে পটলা ও শুভ নামীয়দের সাথে বিরোধ চলে আসছিল। লিপির স্বামী হাসতপাতালে ভর্তি থাকায় তার চিকিৎসা খরচের জন্য গত ২৪/৯/২২ তারিখ রাতে মোটরসাইকেল যোগে তার ছেলে লিটু ও প্রতিবেশি ইলিয়াস ৭০ হাজার টাকা নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। লিটু ও ইলিয়াস নগরীর চৌরঙ্গীর মোড় পৌছামাত্রই নুর উদ্দিনের নেতৃত্বে চক্রটি পুর্ব পরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের উপর হামলা করে। হামলাকারীরা লিটুর পিঠে, উড়–তে এবং কোমরে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে মারাত্বক আহত করে এবং ইলিয়াসকে মাথায় কুপিয়ে আহত করে তাদের সাথে থাকা টাকা লুটে নেয়।
পুলিশ ও এলাকাবাসি সুত্রে জানা গেছে, মাঝে মধ্যেই নুর উদ্দিন পালিয়ে বেড়ান। ঐ সময় তার মাদক ব্যবসা পরিচালনা করেন তার স্ত্রী, পিতাসহ অন্যান্যরা। নুর উদ্দিনের বিরুদ্ধে ৮৮(৪)১৫ নং মাদকের মামলা রয়েছে। অপর অভিযোগে জানা গেছে, মাদক ক্রয়-বিক্রয়ে অনিহা প্রকাশ করায় নুর ইদ্দিনসহ তার সহকর্মীরা সানকিপাড়া মাজার শরীফ রোডের আবুল হোসেন সনিকে গত ২৬ নভেম্বর/২০১৪ তারিখে গোলকিবাড়ি তিন রাস্তার মোড়ে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং নুর উদ্দিন তাকে কোমরে গুলি করে এবং কুপিয়ে মারাত্বক আহত করে। এ ঘটনায় কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা নং ১২১(১১)১৪ দায়ের হয়েছে। অপর তথ্য মতে, বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র ও হেরোইন উদ্ধারের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালী মডেল থানার মামলা নং ৪৯(৮)২০১৭ দায়ের হয়েছে।
অপর এক অভিযোগে জানা গেছে, এই অস্ত্রবাজ ও অস্ত্র ব্যবসায়ীর বাসায় র্যাবের একটি চৌকস টিম গত ২৯ নভেম্বর/২০১৭ তারিখে অভিযান চালিয়ে চারটি বিদেশী পিস্তল, ম্যাগজিন, গুলি, বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে। এ সময় সোহেল নামে একজন গ্রেফতার হলেও নুর উদ্দিন তিলতলা থেকে ল পালিয়ে যায় বলে র্যাব ও এলাকাবাসি দাবি করেছেন। এ ঘটনায় র্যাবের ডিএডি জাহাঙ্গীর আলম বাদি হয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা করেছেন। যার নং ১১৬(১১)১৭। শুধু তাই নয়, নগরীর ইম্পেরিয়াল সুপার মার্কেটের আলিম জুয়েলার্সে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ডাকাতি করে ৪শত ভড়ি স্বর্ণালংকারসহ নগদ টাকা লুটের অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় জুয়েলার্সের মালিক আব্দুল আলীম বাবু কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা নং ৩০(২)২০১৩ দায়ের করেন। মামলায় দীর্ঘ তদন্তশেষে পুলিশ চার্জসীট নং-৩৪৬, তাং ২৫/৪/২০১৪ দায়ের করে। চার্জসীটে নুর উদ্দিনসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বাসে আগুন ও চালককে মারধর করার মামলা নং ৪১(৩)১৩, কোতোয়ালী মডেল থানার হত্যা মামলা নং ৪৫(৩)২০১৬, হত্যা মামলা নং ১৯(২)২০১৫, অস্ত্র মামলা নং-৮(৪)০৯, ৪৭(৪)২০০৮, ৯(১২)০৭, ৪৭(১০)২০০৭, ৮৮(১০)২০০৬ সহ আরো বেশ কয়েটি মামলা রয়েছে। যার প্রত্যেকটিতে আদালতের পরোয়ানা রয়েছে। এলাকাবাসি আরো জানান, নুর উদ্দিন তার লোকজনের অত্যাচারে আকুয়া চৌরঙ্গীর মোড়, মিলনবাগ, ভাঙ্গাপুল, চোকাইতলা, বোর্ডঘর, ওয়ারলেস এলাকার মানুষ অতিষ্ট। তাদের মতে, ঐ এলাকায় কেউ বাসাবড়ি নির্মাণ, জমি ক্রয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করলে তাদেরকে মোটা অংকের চাদা দিতে হয়। চাদা না দিলে তাদের উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতনের ঝড়।