স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার কেশরগঞ্জ বাজার এলাকায় যুগযুগ ধরে বসবাসরত ৪টি হিন্দু পরিবারের ১২ সদস্য এখন সর্বশান্ত। অভিযানে পরিবারটির থাকার ঘর, দোকানপাট, উপাসনালয়সহ ৪ থেকে ৫টি স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সব হারিয়ে পরিবারগুলো নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের নিয়ে চরম মানবেতর জীবন পার করছেন তারা।
হিন্দু পরিবারগুলোর অভিযোগ, তাদের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি বুঝে নিতে চাইলেও অভিযান পরিচালনাকালে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা না মেনেই বুলডোজার দিয়ে তাদের বাড়ি-ঘর গুড়িয়ে দেয় ।
ফুলবাড়িয়ায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেলিনা আক্তার এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদুল করিমের নেতৃত্বে গত ৪ ও ৯ অক্টোবর উপজেলার কেশরগঞ্জ বাজারে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলবাড়িয়ার সহকারী কমিশনার ভূমি সেলিনা আক্তার বলেন, এসব বিষয়ে ইউএনও স্যারই বলতে পারবেন। আপনি তার কাছে ফোন দেন।
এ ঘটনার পরপরই ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য গোপাল চন্দ্র সাহা জেলা প্রশাসক, ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাব, হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ জেলা শাখাসহ বিভিন্ন সংগঠন বরাবর অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ফুলবাড়িয়া উপজেলার পলাশীহাটা মৌজার মৃত জগদীশ চন্দ্র সাহার কাছ থেকে পৈত্রিক সূত্রে তার ৪ সন্তান যুগযুগ ধরে ৭ শতাংশ জায়গা ভোগদখল ও বসবাস করে আসছে। উক্ত ভূমির মধ্যে ১ শতাংশ ভূমি বি.আর.এস রেকর্ডে ভুলবশত ১২৭, ১১১, ১৫৫ নং খতিয়ানে বি.আর.এস রেকর্ডভুক্ত হয়। রেকর্ড ভূমির ভুল ব্যক্তিগণ আদৌ সেই জমিতে দখলে যেতে পারেনি। ঐ পরিবারটির সদস্য গোপাল চন্দ্র সাহা বাদী হয়ে বিজ্ঞ সহকারী জজ ফুলবাড়িয়া আদালতে উক্ত ভুল রেকর্ডকৃত বি.আর.এস খতিয়ান সংশোধনের জন্য একটি মোকাদ্দমা দায়ের করেন যাহার মোকাদ্দমা নং- ১৩/২০২০ অন্য প্রকার। বর্তমানে মোকদ্দমাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এমতাবস্থায় ফুলবাড়িয়া সহকারী (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নালিশি ভূমিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলে বসতবাড়ির স্থাপনার ব্যাপক ক্ষতি হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগকারী হিন্দু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির সদস্য গোপাল চন্দ্র সাহা এবং তার ছোট ভাই নেপাল চন্দ্র সাহা অশ্রুসিক্ত হয়ে বলেন, আমরা আমাদের পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত হয়ে দাদা ও ঠাকুর দাদার জমিতে বসবাস করে আসছি। উচ্ছেদ অভিযানের ব্যাপারে আমাদের কোন নোটিশ দেয়া হয়নি। অতর্কিতভাবে এসে মৌখিকভাবে কয়েক ঘণ্টা সময় দিয়ে সন্ধ্যার পর এসে বুলডোজার দিয়ে আমাদের সবকিছু গুড়িয়ে দেয়। আমরা হিন্দু অসহায় বলে আমাদের উপর আজ এই জুলুম অত্যাচার। আমরা আমাদের থাকার বসতবাড়ি এবং আয়ের একমাত্র উৎস দোকানপাট হারিয়ে রাস্তায় বসে গেছি। কিভাবে আমাদের পরিবার ও পরিবারের ছোট ছোট সন্তানদের মুখে অন্য তুলে দিবো তা একমাত্র ভগবান জানে। আদালতে চলমান মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কেন আমাদের স্থাপনা গুড়িয়ে দিলো। এবারের পূজোয় দুর্গোৎসব করতে পারিনি আমরা। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের মাথা গোঁজার ঠাই চাই।
ফুলবাড়িয়া হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বিপুল হুর বলেন, প্রত্যাঞ্চলের হাটবাজারগুলোতে মূলত খাস জমিই বেশি থাকে। উচ্ছেদকৃত শত বছরের বসবাসরত হিন্দু পরিবারগুলো যদি বাজারের খাস জমিতে বসবাস করে থাকে তাহলে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে কথা বলে তাদের সময় দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানো উচিত ছিল।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ নাহিদুল করিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের জমি সবটুকু খাসে চলে গেছে। ইউনিয়ন ভূমি অফিসের জন্য জায়গার প্রয়োজন বিধায় অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। শত বছর পর এভাবে বসতবাড়ি হারিয়ে পরিবারগুলোর নারী শিশু ও বয়োবৃদ্ধ সহ ১২ সদস্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরলেও কেউ তাদের আকুতি শুনছেনা। এ সব পরিবারের সদস্যরা মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।