ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদারের দায়িত্ব পালন করছেন হাসপাতাল প্রধান নিজেই। রোগীদের খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার নিয়োগ না দিয়ে গত দুই বছর ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বিধান চন্দ্র দেবনাথ আগের ঠিকাদারের নাম ব্যবহার করে নিজেই খাদ্য সরবরাহ করছেন। এ সুযোগে নি¤œমান, পরিমাণে কম ও খাবার অযোগ্য খাদ্য সরবরাহ এবং ভর্তিকৃত রোগীর চেয়ে অধিক খাদ্য সরবরাহ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা লুটে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ফুলবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ফুলবাড়িয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ঐ বছর ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ পান আতিকুর রহমান সুজন নামে একজন। অভিযোগ রয়েছে, সুজন খাদ্য সরবরাহকারী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে হাসপাতাল প্রধান ডাঃ বিধান চন্দ্র দেবনাথ তার সাথে আতাত করে নি¤œমানের খাবার ও পরিমাণে কম এবং ভর্তিকৃত রোগীর চেয়ে অতিরিক্ত রোগী কাগজে কলমে ভর্তি ও খাবার বিতরণ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা তছরুপ ও আত্বসাত করে আসছেন। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে এই হাসপাতালে নতুন করে কাউকে ঠিকাদার নিয়োগ না দিয়ে হাসপাতাল প্রধান নিয়ম বহিঃর্ভুত ভাবে পুরোনো বছরের ঠিকাদারের নাম ব্যবহার করে খাদ্য সরবরাহের কাজ করেছেন। এভাবে চলতি বছর ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ফুলবাড়িয়া উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতালে খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার নিয়োগ না দিয়ে বেআইনীভাবে দুই বছর আগে (এক বছরের জন্য) নিয়োগ পাওয়া ঠিকাদার আতিকুর রহমান সুজনের মাধ্যমে রোগীদের খাদ্য সরবরাহ দেখিয়ে আসছেন।
রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের নিম্নমানের খাবার দেওয়া যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। নি¤œমানের মোটা চালের ভাত (খাবার অযোগ্য), ছোট আকারের পাঙ্গাস কিংবা ছোট আকারের সিলভার মাছের ছোট একটি পিচ, সামান্য ডালের পানি দিয়ে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। গত দু’দিন আগে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় রান্না ঘরে একজন মহিলা রান্না করছেন। দুপুরে রোগীদের জন্য কি খাবার জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাঙ্গাস মাছের তরকারি, ডাল এবং মোটা চালের সাদা ভাত। সকালে কি খাবার দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি সাফ বলেন, এক পিচ রুটি, একটা কলা ও চিনি। তবে দীর্ঘ সময় পর দাবি করেন, এছাড়া সকাল ১০ টায় একটা ডিম দেয়া হয়। একজন রোগী দাবি করেছেন আগের রাতে সিলভার মাছ ও ডালসহ মোটা চালের ভাত দেয়া হয়েছে। যা কোন রোগী তো দুরের কথা একজন সুস্থ্য মানুষও খেতে পারবেনা। আরেক রোগী বলেন, এই হাসপাতালটি অস্বস্থ্যকর। এছাড়া খাবার মান খারাপ হওয়ায় বাহির থেকে খাবার এনে খেতে হয়।
হাসপাতালের প্রধান সহকারী আশরাফ উদ্দিন বলেন, নানা কারণে খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। চলতি বছরে ঠিকাদার নিয়োগ পক্রিয়াধীন রয়েছে। আমরা পুরাতন ঠিকাদারের নামেই খাদ্য সরবরাহের কাজ করছি। আইন-বেআইন সম্পর্কে আমি জানি না। ভর্তিকৃত রোগীদের খাদ্য সম্পর্কে প্রধান সহকারী বলেন, প্রতিজন রোগীর জন্য প্রতিদিন ১২৫ টাকা বরাদ্ধ রয়েছে। এই বরাদ্ধের মধ্যে সকালে রুটি, ডিম, কলা ও চিনি দেয়া হয়। দুপুরে ও রাতে সপ্তাহের দুইদিন বয়লার মুরগী/খাসি ও ভাত। এছাড়া ৪ দিন পাঙ্গাস/রুই মাছ দেয়া হয়। তিনি আরো বলেন, ঈদের দিন ও জাতীয় দিবসগুলোতে ২শত টাকা বরাদ্ধেও মধ্যে একটু ভালোমানের খাবার দেয়া হয়। এরমাঝে সকালে সেমাই, চিনি, দুধ ও কিচমিস দেয়া হয়। দুপুরে মাংস পোলাও ও ডাল দেয়া হয়। প্রতিমাসে কতজন রোগী ভর্তি হয় এ সম্পর্কে প্রধান সহকারী বলেন, জুন মাসে ৯৯৭ জন রোগী ছিল। তবে গড়ে মাসে ১২/১৩ শত রোগী ভর্তিও দাবি করেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (হাসপাতাল প্রধান) ডাঃ বিধান চন্দ্র দেবনাথ বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়। এছাড়া চারটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধ সরবরাহকারী নিয়োগ জটিলতায় হাসপাতালে খাদ্য সরবরাহকারী নিয়োগ পক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। চলতি বছরে ঠিকাদার নিয়োগ পক্রিয়াধীন রয়েছে। খাবার মান সম্পর্কে তিনি বলেন মাত্র ১২৫ টাকায় তিনবেলা খাদ্য সরবরাহ এটা কঠিন। এছাড়া ঠিকাদারের সাথে আতাত করে নি¤œমানের এবং ভর্তিকৃত রোগীর চেয়ে অনেক বেশি রোগীর খাবার বিতরণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা সঠিক নয়। খাবার মান ঠিক আছে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার, ওয়ার্ড ইনচার্জ ও বাবুর্চি তিনজনে খাবার পরীক্ষা করে পরবর্তীতে এই খাদ্য সরবরাহ করা হয়। তবে খাবার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বিতরণ করার নির্দেশনা থাকলে এই হাসপাতালে তা হয়না। হাসপাতালের বাথরুম সহ অন্যান্য নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, পরিষ্কার পরিছন্নতা কর্মী মাত্র ২ জন। আর নতুন নতুন রোগী এসে অপরিষ্কার করে। ২০১২ সাল থেকে সুইপার নিয়োগ বন্ধ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স বলেন, আপনারা হাসপাতালের পরিষ্কার পরিছন্নতার বিষয়ে একটু লিখেন যাতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে।
ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কি বলেন, দুই বছর ধরে খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার নিয়োগ হয় না। এটা কিভাবে সম্ভব। এছাড়া নি¤œমানের খাবার ও ভর্তিকৃত রোগীর চেয়ে অধিক রোগীর নামে খাদ্য সরবরাহ এ সব বিষয়ে আমি খোজ নিয়ে জরুরী ব্যবস্থা নিব।