
ময়মনসিংহে এক ধর্ষণ মামলার বাদীনির ওপর টানা তিন দফা হামলা, লুটপাট ও হত্যার হুমকির ঘটনার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী শিউলী আক্তার (২৫) দাবি করেছেন—বিবাদীপক্ষের ভয়ভীতি, হামলা ও “মামলা তুলে নেওয়ার চাপ” থেকে শুরু করে, থানায় অভিযোগ নিলেও ঘুষের বিনিময়ে “মিথ্যা তদন্ত” দেওয়ায় তার মামলা রুজু হয়নি। ফলে পুরো পরিবার এখন জীবন–ঝুঁকিতে দিন কাটাচ্ছেন। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের কোতোয়ালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের ভাটি ঘাগড়া গ্রামে। শিউলী আক্তারের অভিযোগ—একই এলাকার কামরুল ফকির (৩৫) ও মিলন মিয়া (৩৮)সহ অজ্ঞাত আরও ৫–৬ জন দীর্ঘদিন ধরে তাকে ও তার পরিবারকে নানাভাবে নির্যাতন করে আসছে। ধর্ষণ—আপত্তিকর ভিডিও ধারণ—এবং ৮ দিন ধরে ধারাবাহিক নির্যাতনঃ শিউলী আক্তারের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রথম ভয়ঙ্কর ঘটনাটি ঘটে ১১ আগস্ট ২০২৫ দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে অভিযুক্ত কামরুল জোরপূর্বক ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে এবং আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে। এরপর ১১ থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ভয়ভীতি দেখিয়ে একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করে। এই ঘটনা প্রকাশ করলে শিউলীর স্বামী ইস্রাফিল মিয়া সঙ্গে নিয়ে তারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মোকদ্দমা নং ২১৬/২০২৫ দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর থেকেই তাদের ওপর শুরু হয় পৈশাচিক চাপ,হুমকি এবং প্রভাব খাটানোর চেষ্টা। ৮ অক্টোবর—বাড়িতে হামলা ও লুটপাটঃ
৮ অক্টোবর ২০২৫ দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে বিবাদীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিউলী আক্তারের বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে তার শ্বাশুড়ি মোছাঃ রোজিনা আক্তার (৫৫)–কে মারধর ও ভয়ভীতি দেখায়। মামলা তুলতে চাপ সৃষ্টি করলে তিনি অস্বীকৃতি জানান। অভিযোগ অনুযায়ী, এরপর বিবাদীরা জোরপূর্বক ৭০ হাজার টাকা নগদ ও প্রায় ৬৫ হাজার টাকার স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। চলে যাওয়ার সময় তারা বলে—
“মামলা করলে খুন করে লাশ গুম করে ফেলবো।” ২৪ অক্টোবর—ডেকে নিয়ে নৃশংস মারধরঃ সবচেয়ে নৃশংস হামলাটি ঘটে ২৪ অক্টোবর ২০২৫ সকাল ৮টার দিকে। “দরবার–শালিশ” এর নামে প্রতারণা করে শিউলী ও তার পরিবারের সদস্যদের ডেকে নেয়া হয়। সেখানে মামলা তুলতে বলা হলে তিনি অস্বীকৃতি জানান। এরপর অজ্ঞাত কয়েকজন শিউলীর চুল ধরে টানা–হেঁচড়া করে মাটিতে ফেলে দেয়। লাঠিসোটা,কিল–ঘুষিতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়। স্বামী ইস্রাফিল এগিয়ে এলে তাকেও নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করা হয়।
স্থানীয় লোকজন ছুটে গেলে বিবাদীরা পালিয়ে যায়। পুলিশি অবহেলার অভিযোগ—‘ঘুষ নিয়ে মিথ্যা তদন্তঃ’ সবচেয়ে উদ্বেগজনক অভিযোগ এসেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। শিউলী আক্তার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন—ঘটনার পর তিনি কোতোয়ালী মডেল থানায় অভিযোগ দিলে বিট পুলিশ এসআই খালিদ ও এএসআই আঃ আলী “ঘুষ গ্রহণ করে ইচ্ছাকৃত মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন দেন।” ফলে ওসি মামলা নথিভুক্ত না করায় পরিবার আরও বিপদে পড়ে। আমরা যখন এ বিষয়ে কোতোয়ালী থানা পুলিশের মন্তব্য জানতে চাই,তারা তদন্ত চলমান থাকার কথা বলে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেননি। ‘যে কোনো সময় আমাদের হত্যা বা গুম করে ফেলতে পারে’—ভুক্তভোগীর আর্তি,শিউলী আক্তারের চোখে ভয়—“বিবাদীরা আগ্রাসী,সংঘবদ্ধ। আমাদের পরিবারকে যে কোনো সময় হত্যা বা গুম করে ফেলতে পারে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছি।” তিনি ইতোমধ্যে পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেখানে তিনি চার দফা দাবি জানিয়েছেন—১. অবিলম্বে মামলা রুজুর নির্দেশ। ২.ঘুষের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিভাগীয় তদন্ত।৩.ধর্ষণ–হামলা–লুটপাটসহ সব অপরাধে সঠিক আইনি ব্যবস্থা। ৪.তার ও তার পরিবারের জীবন–নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সংযুক্ত হিসেবে তিনি মারধরের ক্ষতের স্থিরচিত্র ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন দিয়েছেন। সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রশ্ন—ভুক্তভোগীরা কি তবে ন্যায়বিচার পাবেন?
এক নারী বারবার হামলার শিকার—মামলা তোলা নিয়ে ভয়ভীতি—বাড়িতে লুট—হত্যার হুমকি—আর শেষ পর্যন্ত পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ–ভিত্তিক তদন্তের অভিযোগ। এই চিত্র শুধুমাত্র একটি পরিবারের নয়;এটি সমাজের সামনে ন্যায়বিচার ব্যবস্থার এক গভীর সংকট তুলে ধরছে। নাগরিক সমাজের প্রশ্ন—“আইন নিজেই যদি ভিকটিমকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়,তবে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?” ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কি এখন হস্তক্ষেপ করবেন? ভুক্তভোগীর পরিবার কি নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার পাবে—তা এখন সময়ই বলে দেবে।