
ময়মনসিংহ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) যান্ত্রিক শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেনের দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে অবস্থান ও তাকে ঘিরে নানা অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী একই কর্মস্থলে টানা তিন বছর থাকা নিষিদ্ধ হলেও তিনি প্রায় তিন দশক ধরে ময়মনসিংহেই অবস্থান করছেন—যা নিয়ে তীব্র প্রশ্ন তুলছে সচেতন মহল। দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান—অদৃশ্য শক্তির ছায়া? দপ্তরের ওয়েবসাইট অনুযায়ী মোশাররফ হোসেন ২০১৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে যোগদান করেন। তবে এলজিইডির একাধিক কর্মকর্তা–কর্মচারীর দাবি, বাস্তবে তিনি বহু বছর ধরে এখানেই বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন সময়ে বদলির আদেশ হলেও রহস্যজনকভাবে স্বল্প সময়ের মধ্যেই তিনি আবার ময়মনসিংহে ফিরে আসেন। দপ্তরের এক কর্মচারী বলেন, “কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না। দীর্ঘসময় একই জায়গায় থাকায় নানান অনিয়মের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।” দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগঃ সূত্র জানায়—সচল গাড়ি ও যন্ত্রপাতিকে ‘নষ্ট’ দেখিয়ে ভুয়া বিল–ভাউচার তৈরি,মেরামতের নামে অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে সরকারের অর্থ লোপাট,সরকারি তেল চুরি,পুরোনো যন্ত্রাংশ স্ক্র্যাপ দেখিয়ে বাইরে পাচার,ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন ও নিজ নামে–বেনামে সম্পদ বৃদ্ধির অভিযোগ,দীর্ঘদিন ধরেই তার বিরুদ্ধে উঠছে। স্থানীয় ঠিকাদারদের অভিযোগ,দীর্ঘস্থায়ী অবস্থানকে তিনি “দুর্নীতির নিরাপদ ঘাঁটি” হিসেবে ব্যবহার করেছেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ! অনুসন্ধানে জানা যায়,বদলির নির্দেশ ঠেকাতে তিনি প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ব্যবহার করেন। সাংবাদিকরা অনুসন্ধান শুরু করলে তিনি নিজেকে বিভিন্ন নেতার ঘনিষ্ঠজন পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন এবং কয়েকজন সাংবাদিককে আইসিটি মামলার ভয় দেখিয়ে চুপ থাকতে বাধ্য করেন। ঘুষ বাণিজ্য—ঠিকাদারদের ক্ষোভঃ স্থানীয় ঠিকাদারদের অভিযোগ,কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে নিয়মিত ঘুষ নেওয়ার প্রবণতা বহুদিনের। ভুক্তভোগী এক ঠিকাদার বলেন,“দীর্ঘ এক কর্মস্থলে থাকায় তিনি এখানে একক আধিপত্য গড়ে তুলেছেন। কেউ কথা বললেই হয়রানির ভয় থাকে।” সচেতন মহলের ক্ষোভ—দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থার দাবিঃ স্থানীয় নাগরিক সমাজ,ঠিকাদার সংগঠন ও সচেতন মহল বলছে—বছরের পর বছর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন তার বিরুদ্ধে কার্যকর তদন্ত হয়নি, তা তদন্তেরও দাবি রাখে। তাদের ভাষ্য,“দুর্নীতি রোধে নীতিমালা আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর তদন্ত প্রয়োজন।” প্রশাসনের নীরবতায় প্রশ্নঃ এলজিইডির অভ্যন্তরীণ নীতিমালা অনুযায়ী একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন থাকা স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। তবুও কোনো দৃশ্যমান প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নেওয়ায় দপ্তরের তদারকি ও জবাবদিহি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই মনে করেন, প্রভাবশালী মহলের সহায়তা ছাড়া একজন নিম্নপর্যায়ের কর্মকর্তা এত বছর একই কর্মস্থলে থাকা সম্ভব নয়। অভিযুক্তের বক্তব্যঃ অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন,“আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ অসত্য, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।” মোশাররফ হোসেনকে ঘিরে বহুমাত্রিক অভিযোগ শুধু এলজিইডির অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির চিত্র নয়—এটি সরকারি দপ্তরগুলোর তদারকি ব্যবস্থার দুর্বলতাকেও স্পষ্ট করছে। সচেতন মহলের দাবি, নিরপেক্ষ তদন্ত ও কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছাড়া এমন অনিয়ম থামানো সম্ভব নয়।