ময়মনসিংহ। পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ (১৭-২২ ডিসেম্বর ২০২২) উপলক্ষে ময়মনসিংহে এডভোকেসি সভা ও প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সময়মতো নিলে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের হবে উন্নতি শ্লোগানকে সামনে রেখে ময়মনসিংহ জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই সভা হয়।
পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কাজী মাহফুজুল করিমের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল (যুগ্ন সচিব)। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পুলক কান্তি চক্রবর্তী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম মোহাইমেনুর রশিদ (পিপিএম সেবা), ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ পরীক্ষিত কুমার পাড়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল বলেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক আগামী ১৭-২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ উদযাপিত হবে। বাল্য বিয়ে এবং মাতৃমৃত্যু শুন্যের কোঠায় আনতে কাজ চলছে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু ২০৩০ সালের মধ্যে ৭০-এ নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে, অপরদিকে ২০১৯ সালে কায়রোতে অনুষ্ঠিত আইসিপিডি-২৫ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সকল দেশ তিন শূন্য। মাতৃমৃত্যুর শূন্য হার, নারীর প্রতি সহিংসতা- শূন্য এবং অপূর্ণ চাহিদার হার শূন্য’- অর্জন করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে। এ তিন শূন্য অর্জনে অন্যতম বড় বাধা বাল্যবিয়ে। বাংলাদেশে বিয়ের আইনসম্মত বয়স মেয়েদের ১৮ বছর ও ছেলেদের ২১ বছর হলেও বিডিএইচএস ২০১৭-১৮ অনুযায়ী ২০-২৪ বছর বয়সী নারীদের শতকরা ৫৯% এর বিয়ে ১৮ বছর বয়সের আগেই হয়ে যায় যা বিশ্বে চতুর্থ নিম্নতম অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের ১৫-১৯ বছরের কিশোরীদের ২৮% গর্ভবতী হয়, ফলে তাদের নানাবিধ অনাকাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। বাল্য বিয়ে, কৈশোরকালীন মাতৃত্ব, প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ ইত্যাদি কারণে কিশোরী মেয়েরা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকে। কৈশোরে গর্ভধারণের ফলে কিশোরীদের গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া, অপরিণত শিশু বা মৃত শিশু প্রসব, কম জন্ম ওজনের শিশু জন্মলাভ থেকে শুরু করে প্রসবকালে ও প্রসব পরবর্তী সময়ে মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ চলাকালীন প্রচারণা জোরদারকরণে জেলা ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সহযোগিতায় বিশেষ উঠান বৈঠক/মা সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ চলাকালীন সময়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আশ্রয়ন, আবাসন, গুচ্ছগ্রাম এবং বস্তির অধিবাসীদের জন্য বিশেষ পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ চলাকালীন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রতিদিনের তথ্য সংগ্রহ পূর্বক এমআইএস ইউনিটে প্রেরণ করার ব্যবস্থা সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন, সমন্বয় এবং তথ্য এমআইএস ইউনিটে প্রেরণ নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে জেলা কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের নম্বর ০২৯৯ দেশব্যাপী ডেলিভারী ও প্রসব পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানের নিমিত্ত সকল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ২৪/৭ (সপ্তাহের ৭ দিনই ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে) সেবা চালু করা হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত যে কোন সেবা ও তথ্য পেতে দেশব্যাপী ২৪ ঘন্টার কল সেন্টার (নম্বর-১৬৭৬৭) চালু করা হয়েছে। ১৬৭৬৭ এ ডায়াল করে যে কেউ-পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত যে কোন সেবা ও তথ্য গ্রহণ করতে পারেন । এনজিও ও প্রাইভেট সেক্টরে সেবা কেন্দ্র সমুহে একইভাবে স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির ক্যাম্প প্রতি দিনই সংগঠন করে দীর্ঘমেয়াদী ও স্থায়ী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির সেবা প্রদান ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলাব্যাপী পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ চলাকালীন সময়ে প্রতিদিন পরিবার পরিকল্পনার অস্থায়ী, দীর্ঘমেঘানী ও স্থায়ী পদ্ধতির বিশেষ ক্যাম্পের মাধ্যমে স্থায়ী পদ্ধতি (পুরুষ ও মহিলা) ২১৫ জন, আইইউডি ৪৭৫ জন এবং ইমপ্ল্যান্ট ১৪৯০ জন গ্রহিতাকে সেবা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সভায় পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ, স্বাস্থ্য, সুর্যের হাসি ক্লিনিক, মেরী স্টোপস ক্লিনিক, এফপিএবি ক্লিনিক, পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল, সেভ দ্যা চিলড্রেনসহ অন্যান্য সেবা প্রদানকারী সংস্থার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।