নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় আবারও হঠাৎ পাহাড়ি ঢল নেমে এসেছে। উজান থেকে নেমে আসা এই অপ্রতিরোধ্য পানির তোড়ে কংশ ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপজ্জনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীর দুই পাড়ে বসবাসকারী হাজারো মানুষ এখন চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
পাহাড়ি ঢলের ফলে নদীর পানি আশে পাশের গ্রামীণ জনপদ, কৃষিজমি এবং বসতবাড়ির দিকে ধেয়ে আসছে। ইতোমধ্যেই কয়েকটি নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে বলে জানা গেছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এই এলাকার কৃষি নির্ভর সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেন (৫৫) জানান, “আমরা এমনিতেই গরিব মানুষ, চাষাবাদ করেই পেট চলে। কয়েক বছর পর পর এই ঢল আমাদের সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সরকার থেকে তেমন কিছু পাই না, এখন আবার যদি বন্যাতে রাস্তা-ঘাট,ঘর-বাড়ি, এমনকি ফসল নষ্ট হয়, তাহলে কীভাবে বাঁচব?”
শুধু আমির হোসেনই নন, দুর্গাপুর উপজেলার, কাকৈরগড়া, বিরিশিরি, বিরিশিরি হাজংপাড়া, এবং কালিকাপুর এলাকা সহ বহু এলাকার কৃষক ও দিনমজুর পরিবার এখন দুশ্চিন্তায় ভুগছে। একদিকে পাহাড়ি ঢলের পানি, অন্যদিকে নদীভাঙন—এই দুইয়ে পিষ্ট হয়ে অনেকেই ঘরবাড়ি হারানোর শঙ্কায় দিন গুনছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকা থেকে হঠাৎ নেমে আসা ঢলে দুর্গাপুরের নদী গুলো উত্তাল হয়ে ওঠে। কিন্তু এত বছরেও নদী ড্রেজিং বা উপযুক্ত নদী ব্যবস্থাপনার কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়া হয়নি!
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা স্বীকার করেছেন, সমস্যা দীর্ঘদিনের হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি। দুর্গাপুর উপজেলার জনপ্রনিধিরা বলেন, “আমরা বারবার উর্ধ্বতন মহলকে জানিয়েছি। কিন্তু সাড়া পাইনি। এবার যদি সময়-মতো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে!”
উল্লেখ্য, এর আগেও ২০২১ ও ২০২৩ সালে এমন ঢলের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। শত শত কৃষিজমি বালুতে ঢেকে গিয়েছিল, অনেক পরিবার এখনো সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
মানুষ এখন প্রশ্ন করছে—এই শান্তিপ্রিয় জনপদ কি বারবার প্রকৃতির করুণায় ক্ষতিগ্রস্ত হতেই থাকবে? নাকি এবার সময় এসেছে স্থায়ী ও বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানের?
এখনই যদি নদী ড্রেজিং, বাঁধ নির্মাণ, এবং আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করা হয়, তবে দুর্গাপুরের এই জনপদের মানুষকে আরও করুণ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখনই এগিয়ে আসা প্রয়োজন—না হলে আবারো একটি বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে নেত্রকোনার দুর্গাপুর!