স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ প্রাক-প্রাথমিক হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি। প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালু হওয়ার আগে একজন শিক্ষার্থী ৬+ বয়সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতো। বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই তারা অনেক সময় মানুষিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতো। দ্রুত তারা নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে পারত না। অনেক সময় শিক্ষকের কথা বুঝতে পারত না। বাবা-মাকে ছেড়ে দীর্ঘ সময় বিদ্যালয়ে থাকা কষ্টকর হয়ে যেত। ৬+ বয়সি একটি শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তির বয়স হলেও দৈহিক ও মানসিকভাবে বিদ্যালয়ে ভর্তির পর্যায়ে পৌঁছে না। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েই যখন বিদ্যালয়ে পাঠগ্রহণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে তখন শিক্ষার্থীদের অনেকের মনেই বিদ্যালয় ভীতি দেখা দেয়। অন্যদিকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির মধ্যদিয়ে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু হয়ে যায়। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা হলো প্রাথমিক শিক্ষার পূর্ববর্তী এক বছর মেয়াদি শিক্ষায় শিশুর স্বতঃস্ফূর্ত অভিষেক ঘটানোর জন্য আনন্দদায়ক ও শিশুবান্ধব পরিবেশে বিভিন্ন খেলা ও কাজের মাধ্যমে শিশু সক্রিয় অংশগ্রহণে সুযোগ সৃষ্টি করা ও তার আজীবন শিখনের ভিত্তি রচনা করা, বিদ্যালয়প্রীতি সৃষ্টি করা এবং বিদ্যালয় ভীতি দূর করে প্রাথমিক শিক্ষার অঙ্গনে তাদের আনন্দ ও আগ্রহের সহিত অভিষেক ঘটে।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় বলেন, বর্তমান সময়ে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। শ্রেণি কক্ষটি সুন্দর, শিশুবান্ধব ও আকর্ষণীয় করে সজ্জিত। কক্ষটির মধ্যে রয়েছে ৪টি কর্নার যথা- ১. কল্পনার কর্নার ২. বস্নক ও নাড়া-চাড়ার কর্নার ৩. বই ও আকার কর্নার ৪. বালি ও পানির কর্নার। কর্নারগুলোতে রয়েছে সংশ্লিষ্ট উপকরণ প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ক্লাস রুটিনটি অত্যন্ত চমৎকারভাবে করা হয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা আনন্দসহকারে, কখনও নেচে-গেয়ে, অভিনয়ের মাধ্যমে কোনো কিছু শেখার সুযোগ পেয়ে থাকে। প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা ২০ মিনিট নির্দেশনার খেলা এবং ২০ মিনিট ইচ্ছেমতো খেলার সুযোগ পেয়ে থাকে। ইচ্ছেমতো খেলায় তাদের পছন্দমতো কর্নারে গিয়ে সংশ্লিষ্ট উপকরণ দিয়ে ইচ্ছেমতো খেলা করতে পারে। পড়া-লেখার ফাঁকে ফাঁকে খেলার সুযোগ পেয়ে খেলা ও আনন্দের ছলে আগ্রহের সাথে কিছু শিখে সেই শিখনটি দীর্ঘস্থায়ী হয়। বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসতে এবং এসে মজার মজার কাজ গুলো করতে তাদের মধ্যে আগ্রহ দেখা দেয়। প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা নিজেই বিদ্যালয়ে আসার জন্য তার বাবা-মাকে তাগিদ দিয়ে থাকে। খেলা, মজা ও আনন্দের মধ্যে শেখা বর্ণ, ছড়া, গান, গল্প, অভিনয়, চারু ও কারু, প্রাক-গাণিতিক ধারণা, সংখ্যা, যোগ-বিয়োগের ধারণা, পরিবেশ, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও সমাপনী কাজগুলো তারা আয়ত্ত করে ফেলে। যখন তারা প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয় তখন সে পাঠদানের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। যখন সে বর্ণ, সংখ্যা চিনতে পারে, বলতে পারে, ও লিখতে পারে তখন তার কাছে প্রথম শ্রেণির পড়াটা অনেক সহজ মনে হয়। আর এভাবে শ্রেণিভিত্তিক যোগ্যতাগুলো প্রথম শ্রেণি থেকেই আয়ত্ত করা সম্ভব হয়ে ওঠে। আর পরবর্তীতে এভাবে বিষয়ভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতা ও প্রান্তিক যোগ্যতাগুলো অর্জিত হয়ে যায়। প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মেঝেতে বসে বিভিন্ন কাজ পরিচালনার মাধ্যমে ক্লাস নেয় এবং তাদের কাছে টেনে নেয় আদর করে নাচ-গান করে তখন একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষক ও বিদ্যালয়ভীতি সবই দূর হয়ে যায়।
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় বেশ কিছু সুপারিশ করেছেন, যা নি¤েœ তুলে ধরা হলো, প্রতিটি প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ২.৫ ঘণ্টার জন্য দুজন করে শিক্ষক দেয়া। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতেই কম্পিউটারের সঙ্গে শিশুদের সম্পৃক্ত করা। মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে সপ্তাহে ১-২ দিন শিশুদের শিশুতোষ মজার মজার শিক্ষণীয় ভিডিও দেখানো রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করা। শিক্ষার্থীদের জীবনের প্রথম দিনেই বিদ্যালয়ে আগমন উপলক্ষে প্রাক প্রাাথমিক শিক্ষার্থী বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। প্রতি মাসে ধারাবাহিক মূল্যায়ন করে ৪ মাস পর পর যে সার্বিক মূল্যায়ন করা হয় তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা ও তাদের প্রশংসিত করা। বাংলা ও গণিতের পাশাপাশি ইংরেজি বর্ণমালা সম্পর্কে ধারণা দেয়ার ব্যবস্থা করা বা ক্লাস রুটিনে তা উল্লেখ করা।