হলুদ বস্তায় অর্ধগলিত এক অজ্ঞাত নারীর লাশ মিলেছিল ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বওলা ইউনিয়নের দারোগা বাড়ির কবরস্থানের ঝোপের মধ্যে থেকে।
অজ্ঞাতনামা সেই নারীর পরিচয় পাওয়ার জন্য স্থানীয় সাংবাদিকসহ বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়াতে সংবাদ প্রচার।এবং বিভিন্ন স্থানে পোস্টার লাগানোর ব্যবস্থা করে ফুলপুর থানা পুলিশ।তবুও চাঞ্চল্যকর এ লাশের কোনো তথ্য এক মাসেও পাওয়া যায়নি।
মেয়েটি হয়তো বর্বরোচিত খুনের শিকার।কিন্তু হত্যাকাণ্ডের ঘাতক গ্রেফতার দূরের কথা এখনো এই অজ্ঞাত নারীর পরিচয় পর্যন্ত মেলেনি।হত্যাকাণ্ডের কোন ক্লু বের হয়নি গত এক মাসেও বওলার স্মরণকালে এর আগে এমন ঘটনা ঘটেনি কখনো।
বস্তাবন্দি লাশটির গলা টিপে মারার আঘাতের চিহ্ন ছিল অর্ধগলিত ওই নারীর বয়স আনুমানিত ২৮/৩০ বছর হবে বলে জানায় পুলিশ।উদ্ধারের সময় থানা পুলিশের পাশাপাশি সিআইডি ও পিবিআইয়ের দুটি ক্রাইমসিন দল লাশটি পর্যবেক্ষণ করে।এক মাস ধরে মামলাটির ছায়া তদন্ত করছে পুলিশের সবগুলো ইউনিট।
তাৎক্ষণিক পরিচয় না পাওয়ায় ময়নাতদন্তের পর বেওয়ারিশ হিসেবে লাশটি দাফন করে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম।এই ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।ফুলপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই)সবুজ মিয়া।
এই একমাসে রংপুর থেকে আসলো তুলির মা লাশের সন্ধানে,কাপড় চোপড় দেখে তুলির পরিবার যখন থানা চত্বরে বিলাপ করে কান্নাকাটি করছে।তখন তুলি ভিডিও কল করে প্রমাণ করলো সে বেঁচে আছে!এরপর খুলনা থেকে এলো আলোচিত অভিনেত্রী মরিয়ম মান্নান এসে দাবি করেন লাশ তাদের মা রহিমা বেগমের সে কি মিথ্যা মায়া কান্না।প্রশাসন ও মিডিয়াকেও ফেলে দেয় গোলকধাঁধায় পুলিশ আদালতের অনুমতি নিয়ে ডিএনএ টেস্ট করার আগেই খবর আসে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তার মা নিজেই আত্মগোপনে ছিল,জীবিত উদ্ধার হয় নিখোঁজ রহিমা বেগম
ফলে স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।প্রচার মাধ্যমে চলে তোলপাড়।কিছুদিন পর সবাই ভুলে যায় সব কিছু।চাঞ্চল্যকর মামলাটি হয়তো চলে গেছে হিমাগারে।
পুলিশ অজ্ঞাত লাশের ব্যাপারে কোন কূলকিনারা খুজে পায়নি।আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকেই গেল টিকিটিও খুঁজে পায়নি পুলিশ।হতভাগী সেই তরুণীর স্বজনরা এখনও জানে না তাদের আপনজন না-ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছে।
এক গবেষণায় উঠে এসেছে দেশে প্রতি বছরই এমন অন্তত ৮শ’ অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার হয়।এদের পরিচয় কোনদিনও পাওয়া যায় না।ময়নাতদন্তের নামে শবকে ব্যবচ্ছেদকৃত অংশে পড়ে সেলাই!সবশেষে পরিত্যাক্তের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে ট্যাগ ঝুলে পড়ে যত্নের সাথে লিখা থাকে বেওয়ারিশ নাম্বার একশো তেত্রিশ।যদিও আমরা জানি জন্মসূত্রে কেউ বেওয়ারিশ নয়,
তবুও দাফন হয় বেওয়ারিশ হিসেবে;নামমাত্র তার জন্য কারো হা-পিত্তেস নেই অশ্রুসজল নয়নে নেই মোনাজাত,ও রুহের মাগফেরাত কামনা।
স্পর্শকাতর ও গুরত্বপূর্ণ স্থানে লাশ পাওয়া গেলে কিছুদিন হৈচৈ হয়।অনেক সময় খুনীরা লাশগুলো পরিকল্পিতভাবে ফেলে রাখে স্পর্শকাতর স্থানে।এসব লাশ বস্তাবন্দী,হাত-পা বাঁধা ও দ্বিখন্ডিত অবস্থায় পাওয়া যায়।নাম- পরিচয় না থাকায় পুলিশ আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দেয়।নৃশংস খুনগুলোর মামলা আড়ালেই রয়ে যায়।
দীর্ঘ সময় ধরে রিপোর্ট পাওয়া না গেলে ঘটনাগুলো ধামাচাপা পড়ে যায়।কোনদিনও এসব হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হয় না।খুনীরাও আবার উৎসাহিত হয়।নির্মম খুনের শিকার এসব অজ্ঞাত লাশের স্বজনরা জানতে পারে না তাদের আপনজন কোথায় হারিয়ে গেছে।কষ্ট ও বেদনায় স্বজনরা সারাজীবন খুঁজে ফিরে তাদের আপনজনকে।
অজ্ঞাত সেই লাশের সন্ধানে একটা স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।নচেৎ এ ঘটনার প্রভাব স্বাভাবিক সমাজ ব্যবস্থার ও পুলিশের ভাবমূর্তির জন্য খুবই উদ্বেগের হবে।
কারন লাশের আড়ালে একটি জীবন,একটি পরিবার,অনেকগুলো স্বপ্ন ও আশা নিঃশ্বেস হয়ে যায় আর স্বজন হারিয়ে প্রিয়জনরা কাতর হয়।’
যদিও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তৎপরতা বৃদ্ধির দাবি করা হচ্ছে কিন্তু বাস্তবে এক মাসে অজ্ঞাত সেই লাশের পরিচয় না পাওয়ায় পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা কমছে।আর হয়তো অজ্ঞাত নারীর সেই স্বজনদের কান্নায় স্মৃতি
বিজড়িত হৃদয়ের গহীনে কষ্টের পাল তুলছে।
যুগে যুগে মানুষ জন্ম দিয়েছেন মানুষ,চক্রাকারে নিজস্ব বংশগতি রক্ষার্থে একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর রেখে গেছেন তার ওয়ারিশ!মৃত্যুর পর মানুষের পরিচয় কেন হবে বেওয়ারিশ?পৃথিবীতে তো কেউ বেওয়ারিশ হয়ে জন্মায় না