এম এ আজিজ, স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ ময়মনসিংহের নান্দাইলে একরাতে পৃথক জুয়েলারি দোকানে ডাকাতির ঘটনায় ৬ ডাকাত ও ডাকাতির স্বর্ণালংকার কেনার অভিযোগে দোকান মালিকসহ আন্তঃজেলা ডাকাতদেলের সাতজনকে গ্রেফতার করেছে। ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাদেরকে গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার দারুসসালাম এলাকা থেকে দুই ডাকাত, ডাকাতির পন্য কেনায় দোকান মালিক এবং এর আগে আরো ৪জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত দোকান মালিকের কাছ থেকে ৭০ ভড়ি রুপা ও ১১ আনা সোনা উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ডাকাতরা হলো, হাসমত বেপারী ওরফে হাসমত খান ওরফে আচমত আলী খান ওরফে কালাম, জসিম ওরফে মুন্না ও জুয়েলারি দোকানের মালিক ইকবাল হোসেন। এদেরকে বুধবার আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর আগে গত ১০ অক্টোবর গ্রেফতারকৃত চার ডাকাতকে হলো, জসিম বেপারী, শামছদ্দিন মোল্লা, আসাদুল ও শেখ সুজন। বুধবার সকালে পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, গত ২৪ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের নান্দাইল বাজারে দুটি জুয়েলারি ও একটি ফলের দোকানে একদল ডাকাত ডাকাতি করে ১৭ ভরি স্বর্ণালংকার, ৯০ ভরি রূপার অংলকার, দুইটি মোবাইল সেট ও ৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা লুটে নেয়। ডাকাতির খবর পেয়ে থানা পুলিশের একটি টহল দল পৌঁছলে ডাকাতরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে নান্দাইল মডেল থানায় মামলা নং-১৯(৯)২২ দায়ের হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মামলাটিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে ডাকাত দল সনাক্ত, গ্রেফতার, লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা উদ্ধারে ডিবি পুলিশকে নির্দেশ দেন। ডিবি পুলিশ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও আশপাশ এলাকায় টানা অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার রাজধানীর দারুসসালাম থানার দ্বীপনগর এলাকা থেকে দুই ডাকাতকে গ্রেফতার করে। তারা হলো, মাদারীপুরের হাসমত বেপারী ওরফে হাসমত খান ওরফে আচমত আলী খান ওরফে কালাম শরিয়তপুরের জসিম ওরফে মুন্না। তাদের দেয়া তথ্য মতে, ঢাকার আদাবরের সুনিবির হাউজিংয়ের ইকবালের জুয়েলারি দোকানে অভিযান চালিয়ে লুণ্ঠিত ১১ আনা স্বর্ণাংলকার ও ৭০ ভরি রূপার অংলকার উদ্ধার এবং ডাকাতির মালামাল কেনাার জন্য জুয়েলারি দোকানের মালিক ইকবাল হোসেনকে গ্রেফতার করে। পুলিশ সুপার আরো বলেন, গ্রেফতারকৃত ডাকাত হাসমত ও মুন্না নান্দাইল বাজারে ডাকাতির ঘটনা স্বিকার করেছে। এছাড়া দোকান মালিক পুলিশীকে জানায়, সে জেনে বুঝে ডাকাতির স্বর্ণালংকার কিনেছে এবং দীর্ঘদিন ধরে সে ডাকাতির মালামাল কেনাবেচা করে আসছে। এর আগে এ ঘটনায় আরো চারজনকে গ্রেফতার করে। তারা হলো, জসিম বেপারী, শামছদ্দিন মোল্লা, আসাদুল ও শেখ সুজন। তাদেরকে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার আরো বলেন, ডাকাত হাসমত বেপারী ওরফে কালাম ডাকাত মোশারফকে সাথে নিয়ে গত ১১ অক্টোবর নান্দাইলে তার শশুর বাড়ীতে বেড়ানোর অজুহাতে এসে রাতভর সিরিজ ডাকাতির পরিকল্পনায় নান্দাইল বাজার রেকি করে। এর আগে মুন্সিগঞ্জ জেলখানায় তাদের পরিচয় হয়। পরে নারায়গঞ্জের ইউনুস মার্কেটে বসে পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে ২০/২১ জনের একটি ডাকাত দল ঢাকা থেকে নান্দাইল বাজারে এসে ডাকাতরা বাজারের ৭ নৈশ প্রহরী এবং এক পথচারীকে মুখে গামছা ও হাত-পা রশি বেঁধে একটি চায়ের দোকানের অবরুদ্ধ করে রাখে। ডাকাতরা দুটি জুয়েলারি দোকান ও একটি ফলের দোকানে ডাকাতি করে পালানোকালে পুলিশের উপস্থিতি পেয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ১০/১টির অধিক মামলা রয়েছে। ডিবির ওসি সফিকুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রেজাউল আমিন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এসআই পরিমল চন্দ্র সরকার সহ অন্যান্যদের সহায়তায় এই মামলার রহস্য উদঘাটন করেন। প্রেস ব্রিফিংকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পদোন্নতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার) খন্দকার ফজলে রাব্বি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হানুল ইসলাম, ফাল্গুনী নন্দি, ডিবির ওসি সফিকুল ইসলামসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।