স্ত্রী হত্যা মামলায় ১১ বছর আত্মগোপনে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঘাতক স্বামী জামালপুর জেলার সদর থানাধীন নান্দিনা এলাকা হতে গ্রেফতার জামালপুর জেলার র্যাবের আভিযানিক দল।
ভিকটিম মোছাঃ জহুরা বেগম এর সহিত মোঃ ফুরকান আলী (৩৫) শেরপুর এর ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক অনুমান ৬ বছর পূর্বে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। মোঃ ফোরকান আলী(৩৫) জুয়া খেলায় আসক্ত হয়ে পড়লে ভিকটিমের উপর বিভিন্ন সময় মারপিটসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ও নিপীড়ন করতে থাকে। ভিকটিমের নিকট যৌতুকের টাকা দাবি করলে যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং এক পর্যায়ে গত ২-৭-২০১১ ইং তারিখ ভোর অনুমান ০৬:০০ ঘটিকার সময় আসামী মোঃ ফোরকান আলী (৩৫) ভিকটিমের ভাই অর্থাৎ এজারকারীকে মোবাইল ফোনে জানান যে, ভিকটিম মোছাঃ জোহরা বেগম ঘরে গলায় ফাঁস টানিয়ে নিয়ে মারা গেছেন।
উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে এজারকারী তার বাবা-মা সহ বাড়ির লোকজন ভিকটিমের স্বামীর বাড়িতে যান এবং বাড়িতে পৌঁছানোর পর বাড়ির কোন ব্যক্তিকে দেখতে পান নাই ও আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ভিড় দেখেন। ভিকটিমের লাশ দুচালা টিনের ঘরের মধ্যে বাশেঁর ধরনার সহিত গলায় রশি টানানো অবস্থায় দেখতে পান এবং ভিকটিমের গলা ও স্তন সহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে জখমের চিহ্ন দেখা যায়।
অতঃপর এজাজারকারী স্থানীয় লোকদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানতে পারেন যে গত ০১-০৭-২০১১ ইং তারিখ রাত অনুমান ০০:৪৫ ঘটিকায় ভিকটিমের চিৎকার শুনতে পায় এবং ভোরবেলা আসামীর ঘরে ভিকটিমের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায়। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ভিকটিমকে মারপিটেরর পর হত্যা করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখে ভিকটিম আত্মহত্যা করেছে মর্মে প্রকাশ করে আসামিরা বাড়ি হতে পালিয়ে যায়। এজারকারি থানায় সংবাদ দিলে থানা কর্তৃপক্ষ এসে ভিকটিমের লাশ আসামীর ঘরের ধরনা হতে গলায় রশি লাগানো অবস্থায় লাশের সুরতহাল প্রস্তুতপূর্বক পোষ্টমর্টেম করার জন্য শেরপুর সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে ভিকটিমের ভাই মোঃ ফজলুল হক শ্রীবরদী থানা হাজির হয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।
পরবর্তীতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সংশোধন ২০২০ এর ১১(ক)/৩০, অনুযায়ী যৌতুকের দাবিতে গুরুতর মারপিট করে হত্যা ও সহায়তা করে মৃত্যু ঘটানোর অপরাধে শ্রীবরদী থানার মামলা নং ১, তারিখ ০৩-০৭-২০১১ ইং এবং জিআর নং -১০৬/ ২০১১ রজু করা হয়। উক্ত হত্যাকাণ্ডের পর হতে আসামি মোঃ ফোরকান আলী (৩৫) আত্মগোপনে চলে যায়। বিগত ১০ বছর যাবত সে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পরিচয়ে কখনও অটোচালক, শ্রমিক, দিনমজুর, বাসের হেলপার ইত্যাদি পেশায় বসবাস করে আসছিল। পরবর্তীতে বিজ্ঞ বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) নারী ও শিশু শেরপুর মহোদয় গত ১০-৫-২০২২ ইং তারিখ আসামি মোঃ ফোরকান আলী বিরুদ্ধে আনীত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০এর ১১( ক) ধারার অপরাধ সন্দহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায়, মৃত্যুদণ্ড ও ৫,০০০/- টাকা অর্থদণ্ডদন্ডিত হয়। পক্ষান্তরে অন্যান্য আসামীদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ১১(ক)/৩০ ধারার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হয় অভিযোগের দায় হতে খালাস প্রদান করা হয়। অতঃপর বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে আসামীর অবস্থা নিশ্চিত করে অদ্য ১৪-১১-২০২২ ইং তারিখ রাত অনুমান ০১:৩০ ঘটিকায় র্যাব গ্রেফতার করেন।্যাব -১৪, সিপিসি-১, জামালপুর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল জামালপুর জেলার সদর থানাধীন নান্দিনা এলাকায় আত্মগোপনে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী মোঃ ফরকান আলী (৩৫) কে তার আত্মীয় এর বাড়ি হতে আটক করে। ধৃত আসামিকে শ্রীবরদী থানার মামলা নং-১, তাং- ০৩-০৭-২০১১ ইং, জিআর নং- ১০৬/২০১১ মূলে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা