একাত্তরে পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়ে দেশকে স্বাধীন করতে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন আনোয়ারুল হক রফিক। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবার চাকরিতে যোগদান করে যথারীতি অবসরে যান এই মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্য। বর্তমানে তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে বার্ধক্য জনিত নানা জটিলতায় ওয়াক্তা ভাবে অতি কষ্টে জীবন যাপন করছেন। তার উন্নত চিকিৎসা ও অপারেশন প্রয়োজন। তো সেই অর্থ তার নেই। আত্মীয়-স্বজনরা সহায়তা করে তার অপারেশনের জন্য ভর্তি করেছেন ময়মনসিংহের স্বদেশ হসপিটাল।এমন খবরে মর্মাহত হন ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহম্মেদ।তিনি তার চিকিৎসার সকল দ্বায়িত্ব নেন। কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ কামাল আকন্দকে দেখবাল ও তদারকির দায়িত্ব দিলে তিনি সন্ধায় তার হাতে নগদ অর্থ তুলে দেন । নেন সব বিষয়ে খুঁজ খবর। পুলিশের প্রতি পুলিশের এমন মানবতা আরো প্রশংসিত হয়েছে।
অনেক দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর কন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আরও চাইতে লজ্জা লাগে- বলে অসহায় উক্তি ব্যক্ত করেছেন হাসপাতালে শয্যাশায়ী বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. আনোয়ারুল হক রফিক (৭০)।
তিনি আরও বলেন- ডাক্তার বলেছে অপরারেশন না করলে জীবন সংকটাপন্ন হতে পারে। কিন্তু চিকিৎসা করতে লাখ টাকা দরকার। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রতি মাসে ভাতা যা পাই, তা দিয়ে কোন মত সংসার চলে। এখন টাকা ছাড়া চিকিৎসা করতে পারছি না।
এই অবস্থায় একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আর কারও কাছে চাওয়ার জায়গা আমার নেই। বিষয়টি লজ্জার হলেও আমি অসহায়, বলেই হাসপাতালে বেডে বিমূর্ষ হয়ে পড়েন সত্তোরর্ধ্বো এই বীরমুক্তিযোদ্ধা।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুর ৩টায় ময়মনসিংহ শহরের স্বদেশ হাসপাতালে চিকিসাধীন অবস্থায় বাংলানিউজের সাথে কথা হয় কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার কামাসাটিয়া গ্রামের বাসিন্দা এই বীরমুক্তিযোদ্ধার।
এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাঁর চিকিৎসায় সহযোগিতা কামনা করে এভাবেই নিজের অসহায়ত্বে কথা তুলে ধরেন। জানান মুক্তিযোদ্ধের বিভীষিকাময় স্মৃতিমন্থর নানা গল্প।
বলেন- খুব অল্প বয়সেই ১৯৭০ সালে পুলিশ সদস্য হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেছিলেন দু’চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই সিলেট পুলিশ লাইনে থাকা অবস্থায় শুরু হয় দেশ স্বাধীনতার যুদ্ধ। একদিন হঠাৎ পাক হানাদার বাহিনীর আক্রমনে চোখের সামনে সেখানে শহীদ হয় ৮ পুলিশ সদস্য।
এরপর আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেও শত ভয় উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযোদ্ধের ১১ নং সেক্টরে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করি। টানা নয় মাসের যুদ্ধে সহযোদ্ধা অনেকেই শহীদ হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই আমি। এরপর ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে সিলেট পুলিশ লাইনে পুন:রায় চাকরীতে যোগদান করে র্দীঘ কর্মজীবন শেষে বিগত ২০০০ সালে অবসর গ্রহন করি।
আনোয়ারুল হক আরও বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক সরকার হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার মত আর কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের মনে রাখেনি। তাঁর উদারতার কারণেই আজ মুক্তিযোদ্ধারা ভাতা পাচ্ছে। আমি কৃতজ্ঞ বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছে। কিন্তু এখন অসহায় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিকিৎসার সহযোগিতা কামনা করছি। এর বেশি আর চাওয়ার নেই।
জানা যায়, আনোয়ারুল হক দাম্পত্য জীবনে স্ত্রী’সহ দুই ছেলে ও দুই মেয়ে সন্তানের জনক। নিজের জমিজমা যা ছিল তা বিক্রি করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করিয়েছেন। এর মধ্যে বড় ছেলে একটি বেসরকারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত থাকলেও বাকিরা এখনও অধ্যয়নরত।
এই অবস্থায় নিজের চিকিৎসার জন্য বিক্রি করার মত তাঁর কাছে অবশিষ্ট আর কোন জমি নেই বলেও জানান হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী এই বীর সন্তান।
এ সময় পাশে বসে থাকা আনোয়ারুল হকের সহধর্মীনি হাফসা বেগম (৬২) বলেন, অনেকদিন ধরে হার্টের অসুখ ভুগছেন তিনি। সেই সাথে গত কিছুদিন ধরে তাঁর মুদ্রথলিতে মাংস বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও নানা রোগে আক্রান্ত তিনি। গত ১৬ নভেম্বর ডাক্তার দেখিয়েছি। তারা বলেছে- এখন চিকিৎসা না করলে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে।
কিন্তু চিকিৎসা করার মত টাকা আমাদের নেই। এই অবস্থায় আমি আমার স্বামীর চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা চাই। শুনেছি উনি কাউকে ফিরিয়ে দেন না।
তবে এই মুক্তিযোদ্ধার আর্থিক সংকটের বিষয়টি জানা নেই বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাবেয়া পারভেজ।
তিনি বলেন, বীরমুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তবে তিনি আর্থিক সংকটে আছেন বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি উনি বা পরিবারের কেউ আমাদের কাছে আসেন অবশ্যই আমরা তাঁকে সহযোগিতার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।