ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পাননি সেটা জানার পরই বাড়িতে এসে স্যাভলন খেয়ে নিজের প্রাণ নিয়েছেন ১৬-বছর বয়সী এক কিশোরী। রাইজিং বিডি অনলাইনে সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান মিলনের করা রিপোর্টিতে জানা যায় মারা যাওয়া প্রমা দত্ত স্থানীয় বাঁশিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক নির্মল চন্দ্রের মেয়ে।তিনি উপজেলার খায়রুল্লাহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। ফলাফল প্রকাশের তিন–চার ঘণ্টার মধ্যে এই কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনা সংবাদমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে। গত কাল এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল এ মাসের শেষে প্রকাশিত হয়েছে।সংবাদমাধ্যম আমরা দেখেছি সফলতা আর ব্যর্থতার নিকাশ।চাপ বেড়েছে মিষ্টির দোকানে,ফেসবুকের দেয়ালে দেয়ালে।‘সফল’ শিক্ষার্থীদের বাবা–মায়ের সচিত্র দোয়া প্রার্থনা আর শুকরিয়ার মিছিলে ভেসেছে দেশ।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস আর শিক্ষক–অভিভাবকদের সংলাপ,সাক্ষাৎকারে ভরে গিয়েছিল সংবাদপত্রের পাতা,আর ‘বোকা বাক্স’-এর পর্দা।প্রতিবছর ফলাফল প্রকাশের ২৪ ঘণ্টা না যেতেই দুঃখজনক হলেও ‘অসফল’পরীক্ষার্থীদের আত্মহত্যা আর আত্মহত্যাচেষ্টার খবর আসতে থাকে। কেউ কাঁদে,কেউ করে আফসোস।সবাই কী বলবে তা ভেবে কেউ বা মুখ লুকাবে ঘরের কোণে।কারো কারো জীবনকে অর্থহীন মনে হতে থাকবে।কারো বা মনে হবে জীবন বুঝি পরোপুরিই শেষ।ভাবছেন কি এলোমেলো বলছি? পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে।কাঙ্খিত ফলাফল না পেয়ে এমনই পরিস্থিতি বিরাজ করে অনেক শিক্ষার্থীদের মনে সকল আশা ও স্বপ্নের ভিড় ঠেলে চিন্তার জগতে রাজত্ব করতে থাকবে অসফলতার আফসোস।
এখন সমাজটাই এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে ভালো চাকরি,ভাল বেতন—এগুলোই শিশুদের বা তাদের মা–বাবাদের লক্ষ্য হয়ে উঠছে।তাই ওই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য শিক্ষার্থীরা সব সময়ই একটা চাপের মধ্যে থাকে। আবার বাবা–মায়েরাও নিজেদের অসম্পূর্ণ স্বপ্নগুলো সন্তানদের মধ্য দিয়ে পূরণ করতে চায়। যেটা আমরা করতে পারিনি,সেটা যেন ওরা করে দেখায়।সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্যে একটা ভয়ংকর অবস্থা তৈরি করা হচ্ছে।’তবে কিশোরীদের হার কেন বেশি?এ প্রশ্নের কোনো জুতসই উত্তর আমাদের কাছে নেই। গত তিন বছরে এসএসসি পরীক্ষার পর ১৫০ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে আর ৩ হাজার ৭৫০ জনের কিছু বেশি আত্মহত্যার চেষ্টা করে।এর মধ্যে ৪০০ জন আবার দ্বিতীয়বার চেষ্টা করেছিল।এগুলো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর।বলা বাহুল্য,আত্মহত্যার খবর প্রচার পেলেও আত্মহত্যার প্রচেষ্টার খবর তেমন জানা হয় না।বিধায় অপ্রকাশিত কষ্টগুলো জানার কোনো উপায় নেই। আমাদের দেশে সংখ্যা আর শঙ্কা নিয়ে কখনো কেউ একমত হতে পারে না।শঙ্কার ভিত্তি রচনা করে সংখ্যা।আর আমাদের সব সংখ্যায় থাকে গড়মিল আর গোঁজামিলের রাজত্ব।তারপরও প্রশ্ন আসে,এই সংখ্যা রাখবে কোন মন্ত্রণালয়? রেখেই–বা কী করবে?যে মরার সে মরবে,যে বাঁচার সে বাঁচবে—এ রকম দায়সারা অবস্থানই তো আমাদের নীতি।