ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বাদামিয়া, ভার্সিটি মোড়, খলাবাড়ি এলাকায় গত তিনমাস ধরে জুয়ার আসর চলছে। ত্রিশালের বিভিন্ন এলাকা ও ফুলবাড়িয়াসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে জুয়াড়িরা এসে এতে অংশ নিচ্ছেন। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি পুলিশকে জানালেও তারা এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
পুলিশের দাবি, তারা বিষয়টি জানেই না। অথচ জুয়ার আসরটি ত্রিশাল থানার অদূরেই বসে। অর্থাৎ ভার্সিটির মোড়ে একটি বাড়িতে। থানার সামনে দিয়েই প্রতিনিয়ত গাড়ি চলে।এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক মাস থেকে বাদামিয়া, ভার্সিটির মোড়, বিররামপুর,রাগামারা ও খলাবাড়িতে জুয়ার আসর বসে। ত্রিশালের কয়েক ব্যক্তি এই জুয়ার আসরের হর্তাকর্তা হলেও স্থানীয় থানা পুলিশ তাদের চেনেন না। অভিযোগ আছে, সন্ধ্যার পর থানা বাউন্ডারির ভিতরে জুয়ারীর গডফাদারা আড্ডা দিতে দেখা যায়।
জানা গেছে, বাদামিয়ার আনোয়ারুল ও বাচ্চু, ভার্সিটি মোড় মন্টু ও রশিদ, ত্রিশালের শেষ সীমানা খলাবাড়ি এলাকায় চলে আরো দুটি স্পট। অভিযোগ আছে, প্রতি সপ্তাহে থানা পুলিশকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা মাসোয়ারা দেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপ থাকলেও থানা পুলিশ আগেই মাধ্যমকে জানিয়ে দেয়।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, ফসলি জমিতে বাঁশের খুঁটিতে পলিথিন টানিয়ে তিনটি ঘর বানানো হয়েছে। রাত নয়টা থেকেই ময়মনসিংহের ত্রিশালের বিভিন্ন এলাকা থেকে ও ভালুকা, ফুলবাড়িয়া উপজেলা থেকে মাইক্রোবাস, ব্যক্তিগত গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে জুয়াড়িরা আসতে শুরু করেন।
তিনটি ঘরের একটিতে চলে ‘ওয়ান টেন’ জুয়ার আসর। এ ছাড়া একটি ঘরে জুয়াড়িদের খাবার ব্যবস্থা ও অন্যটিতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে ভোর হওয়ার আগেই জুয়াড়িরা আসর ছেড়ে চলে যান। ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, ভার্সিটি মোড়ের জুয়ার আসরের এক কিলোমিটারের মধ্যেই ত্রিশাল থানা। পুলিশের চোখের সামনে প্রতি রাতে এত বড় জুয়ার আসর বসলেও পুলিশের কোনো ভূমিকা নেই।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, জুয়ার আসর থেকে প্রতি রাতে পুলিশ মাসোহারা পায়। এ ছাড়া স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিও জুয়ার আসর থেকে টাকা নেন। একজন জুয়াড়ি জানান, প্রতি রাতে এখানে আনুমানিক ১৫০ জন জুয়াড়ি আসেন। কয়েক লাখ টাকার খেলা হয়। রাতে পুলিশ ও তাদের দালাল এসে টাকা নিয়ে যায়।
এক জুয়াড়ি বলেন, জুয়ার আসর চালাতে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে প্রতি রাতে টাকা দিতে হয়। পুলিশকে প্রতি রাতে কত টাকা দিতে হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমি জানি না।
আয়োজকরা ওয়ান টেনের আসরটি চালান। কোথায় কত টাকা দিতে হয়, সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে তিনি মুঠোফোন নম্বর দিতে রাজি হননি। তিনি আরো বলেন, আরে ভাই আপনি বুঝেন না , থানা পুলিশকে প্রতি সপ্তাহে টাকা দিতে হয়। আপনারা সাংবাদিক , কয়জন আসছেন, প্রতিজন ১ হাজার করে টাকা নিয়ে যান। সব জায়গায় টাকা দিয়ে আমাদের তেমন লাভ থাকে না। আরে ভাই থানা পুলিশের চাপ প্রচুর তাদের বেশি দিতে হয়। প্লিজ ডিস্টার্ব করবেন না।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মাইন উদ্দিন বলেন, পুলিশ এ জুয়ার আসরের বিষয়ে কিছুই জানে না। অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে