স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ প্রাথমিকে বিদ্যালয় পরিদর্শন ও তত্ত্বাবধানে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারগন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। এনাম কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৮২ সালে সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার পদ সৃষ্টির পর ১৯৮৪ সালে রাজস্ব বাজেটে মঞ্জুরি আদেশ হয়। এ পদে জনবল যোগদানের পর থেকেই প্রান্তিক লেভেলে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে থাকে। বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে আছে ৬৩ হাজার ৬০১ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ক্লাস্টার পর্যায়ে বিভাজিত এসব বিদ্যালয় গুলোর শিক্ষার মান উন্নয়নে নিয়মিত পরিদর্শন এবং তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত আছেন প্রায় ১৮শ (১৭৯৮) জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার।
ময়মনসিংহ সদর সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাহিদা পারভেিনর মতে, তত্ত্বাবধান কেবল পত্রে নির্দেশ দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে তা পর্যবেক্ষণ করাকেও বুঝায়। তত্ত্বাবধান একটি প্রক্রিয়াও বটে। তত্ত্বাবধানে কাজ সম্পন্ন করতে কোন কোন সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কার্য সম্পন্ন, মতবিনিময়, যুক্তি উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করা বুঝায়। অর্থাৎ তত্ত্বাবধান হচ্ছে বহুমুখী কর্মসম্পাদন প্রক্রিয়া। যে কোন কার্যক্রমে তত্ত্বাবধান একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে গন্য করা হয়। তত্ত্বাবধান শব্দের উৎপত্তি, ধারণা ও পরিধি সম্পর্কে কিছু কিছু নবতর দিক সংযোজিত হয়ে এর পরিসরের বলয় সম্প্রসারিত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার সঠিক বাস্তবায়ন, পড়ালেখার পরিবেশ,শিক্ষার্থীদের পঠন এবং লিখন দক্ষতা বৃদ্ধিকরণে প্রধান শিক্ষকসহ সকল শিক্ষককে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান, শিখন ঘাটতি দূর করণে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় অংশীজনেরর সহায়তায় বিদ্যালয়ের উন্নয়ন এবং সরকারি সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে তাদের সহযোগিতাসহ যাবতীয় কাজ মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে এ পদে কর্মরত লোকজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গঠনে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে নিয়মিত পরিদর্শন এবং সঠিক তত্ত্বাবধান খুবই প্রয়োজন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিখন-শিক্ষণ কার্যের মানোন্নয়নে তত্ত্বাবধান গুরুত্বপূর্ণ। তত্ত্বাবধানে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী এবং শ্রেণীকক্ষের কাজের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা থাকে। তত্ত্বাবধানকারী নির্দেশনা প্রদান এবং বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ই- মনিটরিং ভিত্তিক এ্যাপসের মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রত্যেক সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার নির্ধারিত ১০ টি পরিদর্শন করে থাকেন। ঝরে পড়া রোধ, ফলাফল ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতির জন্য মা সমাবেশে উপস্থিত হওয়া, ক্যাচমেন্ট এলাকায় উঠান বৈঠক কিংবা হোম ভিজিটে অংশগ্রহণ এবং অভিভাবক সমাবেশে উপস্থিত থাকাসহ নির্ধারিত পরিদর্শনের অতিরিক্ত আরো পরিদর্শন করতে হয়। এসব পরিদর্শন, তত্ত্বাবধান আর সঠিক নির্দেশনার সুফলও আসতে শুরু করেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামগ্রিক চিত্র এখন আর আগের অবস্থানে নেই। পাশাপাশি পরিদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করে শ্রেণি শিক্ষাদান পদ্ধতির মানোন্নয়ন, প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং দেশের কল্যাণে সেবাদান নিশ্চিতকরণের প্রক্রিয়াটি নিশ্চিত করা হয়। মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত পরিদর্শন আর তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে এই কাজগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসারগন।
উপজেলা পর্যায়ের অফিসার হওয়ায় নিজ দপ্তরের পাশাপাশি ট্যাগ অফিসার হিসেবে অন্যান্য কাজেও নিয়োজিত থাকেন। প্রাথমিক শিক্ষা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মকর্তাগন নিয়োজিত আছেন। পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার সঠিক তত্ত্বাবধানে সহজীকরণের জন্য বিদ্যালয়গুলোকে ক্লাস্টার পর্যায়ে বিভাজন করা হয়েছে। একটি ক্লাস্টারে ১৫/২০ টি কিংবা তারও অধিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর এই ক্লাস্টারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন একজন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার। পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় দেশের অনেক উপজেলায় একজন একাধিক ক্লাস্টারের দায়িত্ব পালন করেন। ক্লাস্টার সঠিকভাবে পরিচালনা এবং বিদ্যালয়ের শিখন শেখানো কার্যক্রমের উন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের নিয়ে সাব- ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ শুরুর সময় হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই প্রশিক্ষণটি পিছিয়ে পড়া শিক্ষকদের সামনের সারিতে নিয়ে আসতে এবং সরকারের যে কোন ম্যাসেজ/বার্তা স্বল্প সময়ের মধ্যে সারাদেশে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। ৩ মাস অন্তর অন্তর এ প্রশিক্ষণটি হতো। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের পাশাপাশি প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। করোনাকালীন সময়ে দীর্ঘদিন সরাসরি পাঠদান বন্ধ থাকায় সাব ক্লাস্টার পর্যায়ে প্রশিক্ষণটি বর্তমান সময়ে অতীত হতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে প্রাথমিক শিক্ষা আজ যুগোপযোগী। মাঠ পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষার ক্রমাগত উন্নয়নে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারগন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। সঠিক নির্দেশনা, ভালো কাজের স্বীকৃতি, নির্ধারিত সময়ে পদোন্নতি এবং এ পদটির গ্রেড উন্নয়ন হলে কর্মকর্তাগনের মাঝে আরও বেশি কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে বলে দাবি করে বই আকারে লিপিবদ্ধ করেছেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাহিদা পারভিন।