হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে তামাক সেবন ও ধূমপানের প্রচলন ছিল না। প্রায় হাজার বছর পরে তা বিভিন্ন দেশে প্রসিদ্ধ লাভ করেছে। পানাহারের বিষয়ে একটি মূলনীতি হলো, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে বিদ্যমান না থাকার কারণে যেসব খাদ্য ও পানীয় সম্পর্কে তার কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই, সেসব বিষয়ে তার অন্যান্য নির্দেশনার আলোকে ইজতিহাদ (গবেষণা) করে নতুন বিষয়ে হুকুম আরোপ করতে হবে। তামাক ও ধূমপান প্রচলিত হওয়ার পরে কোনো কোনো ইসলামি স্কলার মতপ্রকাশ করেন যে, তা মুবাহ বা বৈধ। কারণ তা অবৈধ হওয়ার মতো কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ পাওয়া যায় না। তবে বেশিরভাগ ইসলামি স্কলার মতপ্রকাশ করেন যে, ধূমপান মাকরুহ তথা শরিয়তের দৃষ্টিতে অন্যায় ও অপছন্দনীয় কর্ম। এর কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন, দেহে বা মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে এমন খাদ্য ভক্ষণ করতে রাসুলুল্লাহ (সা.) নিষেধ করেছেন। বিশেষ করে এরূপ খাদ্য গ্রহণ করে মসজিদে গমন করতে নিষেধ করে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ রসুন খায় তবে সে যেন তার দুর্গন্ধ দূর হওয়া পর্যন্ত মসজিদে না আসে বা আমাদের সঙ্গে নামাজ আদায় না করে এবং রসুনের দুর্গন্ধ দিয়ে আমাদের যেন কষ্ট না দেয়। কারণ মানুষ যা থেকে কষ্ট পায়, ফেরেশতারাও তা থেকে কষ্ট পায়।’ ( সহিহ বুখারি)এ হাদিসের আলোকে ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, পেঁয়াজ, রসুন বা কোনো দুর্গন্ধযুক্ত খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করে মুখে বা দেহে দুর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে গমন করা মাকরুহ। আর ধূমপানের মাধ্যমে মুখে যে দুর্গন্ধ হয় তা পেঁয়াজ বা রসুনের দুর্গন্ধের চেয়ে অনেক বেশি কষ্টদায়ক। আর পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি খেয়ে মুখের দুর্গন্ধ দূর করে মসজিদে যাওয়ার সুযোগ আছে, কিন্তু ধূমপানের দুর্গন্ধের ক্ষেত্রে তা মোটেও সম্ভব নয়। এজন্য বেশির ভাগ স্কলার একমত হন যে, ধূমপান সর্বাবস্থায় মাকরুহ। বৈজ্ঞানিক গবেষণাতেও প্রমাণিত হয় ধূমপান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক। এজন্য আধুনিক যুগের বেশিরভাগ ইসলামি স্কলার ধূমপান নাজায়েজ বলেছেন। কারণ তা সুনিশ্চিতরূপে ক্ষতিকারক। আর আল্লাহ স্বহস্তে নিজেকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দিতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা নিজ হাতে নিজদের ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।’ (সুরা বাকারাহ ১৯৫) ইসলামি স্কলাররা এই বিষয়ে একমত যে, যা দ্বারা ক্ষতি হয় এবং ধ্বংস টেনে আনে তা থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। আর ওয়াজিব না মানা সম্পূর্ণ হারাম। তামাক সেবনের আরেকটি ক্ষতি হলো, এতে মুখে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ হয়। আর মুখে দুর্গন্ধ নিয়ে নামাজ পড়লে, দোয়া করলে তা কবুল না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এতে রহমতের ফেরেশতারাও কাছে থাকবে না। ফলে আল্লাহর দয়া থেকে বঞ্চিত হতে হবে। তাই ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হতে না চাইলে আজই তামাকজাত দ্রব্য পরিহার করুন।