আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না বেনাপোল কাস্টমস। যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পণ্য আমদানি প্রায় ২ লাখ ৫৮ হাজার টন কমেছে।
মূলত বৈশ্বিক মন্দা আর ডলার সংকটের কারণে ঋণপত্র বা এলসি খুলতে না পারায় আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। বেনাপোল কাস্টমস সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৮৩ টন পণ্য আমদানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময় আমদানি হয়েছিল ১৭ লাখ ৫৫৩ টন। ওই হিসাবে আমদানি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৭০ টন কমেছে। আর আমদানি কমে যাওয়ার কারণে রাজস্ব আয়ের পরিমাণও কমেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বেনাপোল কাস্টমসের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। সেখানে আয় হয়েছে ৫ হাজার ২১৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। এই ১০ মাসে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আয় কমেছে ৬৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, ডলার সংকট ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আমদানিকারকরা আমদানি করতে পারছেন না। দ্রুত সংকট না কাটলে বছর শেষে আমদানির পরিমাণ আরো কমে বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতির কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয় তার ওপর প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আমদানি কমে যাওয়ার কারণে গত কয়েক বছর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না বেনাপোল কাস্টমস। সূত্র আরো জানায়, ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি এবং সংকটের কথা বলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কয়েক বছর ধরে এলসির সংখ্যা কমিয়েছে।
এতে আমদানি কমায় রাজস্ব ঘাটতি দেখা গেছে। ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছে না। সরকার নির্ধারিত ডলার রেট থাকলেও বর্তমানে ১০০ ডলারের বিপরীতে ব্যাংক ১২৫ থেকে ১২৮ টাকা পর্যন্ত কাটছে। এর প্রভাবে দেশে শিল্পণ্ডকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত ও আমদানি পণ্যের মূল্য লাগামহীনভাবে বাড়ার আশঙ্কা রেেয়ছে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা জানান, ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধির কারণে পণ্য আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার ব্যাংকগুলোও এলসি করতে চাইছে না। মূলত ডলার সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারকরা। আবার কিছু এলসি করা গেলেও ডলারের বিনিময় হার বেশি।
এতে করে পণ্যের দাম বেশি পড়ছে। আর আমদানি কমে গেলে সরকারের রাজস্ব আয়ও কম হবে, এটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম-কমিশনার সাফায়েত হোসেন জানান, ব্যবসায়ীরা পণ্য আনার জন্য ব্যাংক থেকে এলসি খুলতে পারছেন না। যে কারণে আমদানি কমে গেছে। আর আমদানি কমলে রাজস্ব আয়ও কমে যাবে, এটা স্বাভাবিক। এখানে কোনো শুল্ক ফাঁকি দেয়ার সুযোগ নেই। শুল্ক ফাঁকি রোধে বেনাপোল কাস্টমস কঠোর অবস্থানে রয়েছে।